ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে সংকট

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে সংকট ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৯:৫১, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বর্তমানে তলানিতে পৌঁছেছে, কিন্তু রপ্তানি খাত স্থবির অবস্থায় রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতি দেখে হতবাক, তবে এর মূল কারণ হচ্ছে নয়াদিল্লির বারবার অস্থায়ীভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের নীতি।

এর ফলে বাংলাদেশের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্রেতারা ভারতীয় পেঁয়াজের বিকল্প খুঁজে পাকিস্তান ও চীন থেকে পণ্য সংগ্রহ করছে। একসময় ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া পেঁয়াজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, গত আট মাসে বাংলাদেশ ভারত থেকে খুবই সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ কিনেছে, যদিও ঢাকার বাজারে দাম ভারতের স্থানীয় বাজারের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। অন্যদিকে সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে খুব কম পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করেছে।

ভারতের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ বেআইনিভাবে রপ্তানি হচ্ছে। এই বীজই ভারতের ঐতিহ্যবাহী ক্রেতাদের স্বাবলম্বী করতে সাহায্য করছে, যা ভারতের পণ্যের বাজারে দীর্ঘদিনের আধিপত্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

হর্টিকালচার প্রোডিউস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রধান অজিত শাহ বলেন, “আমরা আমাদের গুণমানের জন্য অতিরিক্ত দাম নিতে পারতাম। কিন্তু দীর্ঘদিন বাজারে না থাকার কারণে গ্রাহকরা বিকল্প সরবরাহকারীর দিকে চলে গেছে। এখন তারা গুণমানের তুলনা নয়, বরং দামের তুলনা করে।”

২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এর আগেও ২০১৯ ও ২০২০ সালে একাধিকবার রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীল দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ সরকারও ২০২০ সালে ঘন ঘন রপ্তানি নীতি পরিবর্তনের কারণে ভারতের কাছে একটি কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছিল। বর্তমানে দেশের কৃষকদের সুরক্ষা ও স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমিয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৭ লাখ ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ কিনেছিল, যা ছিল মোট ভারতীয় রপ্তানির ৪২ শতাংশ। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১২,৯০০ টন পেঁয়াজ কেনা হয়েছে।

রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করছে না। তারা ইয়েমেন ও ইরান থেকে প্রতিযোগিতামূলক দামে পেঁয়াজ সংগ্রহ করছে। এমনকি ফিলিপাইনসও চীন থেকে পেঁয়াজ না পেলে ভারত থেকে কেনে।

এইচপিইএর সহসভাপতি বিকাশ সিং বলেন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ ব্যবহার করে নিজস্ব পেঁয়াজ উৎপাদন করছে।

এই প্রবণতা ভারতীয় কৃষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। চাহিদা শুধু প্রতিবেশী দেশেই সীমিত নয়, চীন ও পাকিস্তানেও ভারতীয় পেঁয়াজের বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement