চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণে ব্রিজ ভেঙে যান চলাচল বিঘ্নিত

Published : ১৬:৪৩, ৭ আগস্ট ২০২৫
স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে প্রবল পানির চাপ ও নিচের মাটি সরে যাওয়ার কারণে ব্রিজটির একটি অংশ ধসে পড়ে। দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম। বায়েজিদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সামশুল আলম বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ব্রিজের একটি পাশ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। দ্বিতীয় পাশ দিয়ে খুব সীমিত আকারে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যানবাহন চলাচল করছে। দুর্ঘটনা এড়াতে লাল ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।” সড়কটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নাজিরহাট, হাটহাজারী ও নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সংযোগ সড়ক হওয়ায় ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার প্রভাব পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকেই অক্সিজেন মোড় থেকে ২ নম্বর গেইট পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
ট্রাফিক পুলিশ জানায়, সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ায় যান চলাচলে ধীরগতি তৈরি হয়েছে, যার ফলে অফিস ও স্কুলগামী মানুষকে দীর্ঘক্ষণ সড়কে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। একজন স্কুলশিক্ষিকা বলেন, “সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হলেও ৯টা ৩০ পর্যন্ত স্কুলে পৌঁছাতে পারিনি। বৃষ্টি, যানজট আর ভাঙা রাস্তা — সব মিলিয়ে ভয়াবহ অবস্থা।” অন্যদিকে, নগরবাসীর অন্যতম নির্ভরযোগ্য মাধ্যম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন ও নাজিরহাট রুটের ট্রেন চলাচলও বিলম্বিত হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগের চাপ ট্রেন স্টেশনগুলোর কাছেও প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ের এক কর্মকর্তা। এদিকে চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) নগরে ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, “বর্তমান মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।” এর ফলে ভূমিধস, সড়ক ধস, জলাবদ্ধতা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। শুধু ব্রিজ ধস নয়, নগরের বিভিন্ন নিচু এলাকাও ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। চাক্তাই, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, কাতালগঞ্জ, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে রয়েছে। এতে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী কর্মজীবী মানুষ এবং দোকানপাটের ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
নগরের বিভিন্ন মোড়ে বাস-অটোরিকশার জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নগরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণেই প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এমন দুর্ভোগ দেখা দেয়। "বৃষ্টি হলেই চট্টগ্রাম অচল হয়ে পড়ে" — এই অভিযোগ যেন এখন নিয়মিত বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একজন প্রকৌশলী জানান, প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজটি মেরামতের জন্য জরুরি তহবিল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি বিকল্প রুটের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়। তিনি বলেন, “বৃষ্টি কমলে দ্রুত মেরামত কাজ শুরু করা হবে।” চট্টগ্রামে রাতভর টানা বৃষ্টির ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ধসে পড়া এবং পুরো নগরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়া আবারও নগরের অবকাঠামোগত দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরেছে। বর্ষা মৌসুমে এমন পরিস্থিতি এড়াতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে নগরবাসী।
S