ঝিনাইদহে সরকারের বেঁধে দেওয়া ২৭ টাকার সার বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়

Published : ১৩:১১, ৯ আগস্ট ২০২৫
গ্রামের মাঠে মাঠে এখন আমন আবাদের প্রস্তুতি চলছে। সেই সঙ্গে শীতকালীন সবজি চাষের জন্যও মাঠ প্রস্তুত করছেন কৃষকেরা। তবে এ মৌসুমে বেশ বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। কারণ, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সার।
সরকার যেখানে টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) সারের দাম প্রতিকেজি ২৭ টাকা নির্ধারণ করেছে, সেখানে স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।
সম্প্রতি ঝিনাইদহের সদর, শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, সার বিক্রিতে সক্রিয় রয়েছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। কৃষি অফিস ও ডিলারদের কাছ থেকে ঠিকমতো সার না পেয়ে কৃষকরা বাধ্য হয়ে বেশি দামে বাইরে থেকে সার কিনছেন। অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় অসাধু ডিলার সরকারি গুদামের সার রাতের আঁধারে পাচার করে কালোবাজারে ছাড়ছেন।
সূত্র জানায়, সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের সারের ডিলার হাজী জাহাঙ্গীর, দোগাছী ইউনিয়নের ডিলার উজ্জ্বল হোসেন, শৈলকুপার দুধসর ইউনিয়নের ডিলার সাইয়ুব আলী জোয়ার্দার, হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার ডিলার মাহবুব হোসেন, কাপাসাটিয়া ইউনিয়নের ডিলার সোনা জোয়ার্দার মিলে দীর্ঘদিন ধরে একটা সক্রিয় সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন।
এই সিন্ডিকেটই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে অধিক মূল্যে বিক্রি করছে। ইউরিয়া প্রতিকেজি ২৭ টাকার পরিবর্তে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়, এমওপি প্রতিকেজি ২০ টাকার পরিবর্তে ২৭ থেকে ৩০ টাকায়, ডিএপি প্রতিকেজি ২১ টাকার পরিবর্তে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়, টিএসপি প্রতিকেজি ২৭ টাকার পরিবর্তে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার এক সারের ডিলার জানান, আমাদের এ অঞ্চলে বর্তমানে সবজি চাষ বেড়ে গেছে।
সবজি চাষের জন্য টিএসপি সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাষিদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেক ডিলার টিএসপি সার অধিক দামে বিক্রি করছে।
সদর উপজেলার চাপড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ মল্লিক বলেন, ‘আমি চার বিঘা জমিতে বেগুন ও কাঁচা মরিচের চাষ করেছি। বেগুন ও কাঁচা মরিচ চাষের জন্য টিএসপি সার খুব দরকারি। বাজারে ডিলারদের কাছে গিয়ে সরকারি দামে সার পাই না,
তাদের কাছে গেলে বলে, সার শেষ হয়ে গেছে। পরে ওই ডিলারের কাছে অন্য এক কৃষককে পাঠিয়ে একই সার ৬২ টাকা কেজিতে কিনে এনেছি।
শৈলকুপার শেখড়া গ্রামের কৃষক গোলাম নবী বলেন, প্রতি মৌসুমেই একই অবস্থা তৈরি হয়। ডিলারদের কাছে গেলে সরকারি মূল্যে সার দেয় না। তারা বলে, সার শেষ হয়ে গেছে। এ নিয়ে কৃষি অফিস ও সংশ্লিষ্টদের জানালেও তারা তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। ফলে সিন্ডিকেটের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি।
জেলা সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মাসুম রানা বলেন, প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এ সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়। যে সকল ডিলাররা অধিক মুনাফার আশায় কৃষকদের কাছ থেকে সারের অধিক মূল্য আদায় করছেন, তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বাড়বে, সেই প্রভাব বাজার পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায় বলেন, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী সার মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকের কাছে তা অধিক মূল্যে বিক্রি করছে। এমন খবরে আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। কয়েকজন সারের ডিলারকে ইতিমধ্যে জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কৃষকের স্বার্থে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছি। আশা করছি শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান করা যাবে।