রংপুরে টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইনে ব্যাকলগ

Published : ১৯:৩১, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
সারাদেশে চলমান টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনে রংপুর বিভাগ অন্য বিভাগের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। প্রায় ৪৯ লাখ শিশুকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও,
এখন পর্যন্ত মাত্র ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮৫ শিশুকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। এ তথ্য শনিবার (১৮ অক্টোবর) রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় জানানো হয়।
জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের আয়োজনে ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হিরুজ্জামান।
তিনি বলেন, চলমান ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশের প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টাইফয়েড টিকা প্রদান করা হবে। তিনি আরও সতর্ক করেছেন, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে অঙ্গহানি, অন্ধত্ব, শ্রবণশক্তি হ্রাস এবং এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই টিকা শিশুদের শরীরে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে এবং ইমিউনিটি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ।
মুহাম্মদ হিরুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা এই কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা টিকা গ্রহণ সম্পর্কিত বিভ্রান্তি দূর করতে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং গুজব প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. আবু জাফর। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা ও ইউনিসেফ রংপুরের সোশ্যাল অ্যান্ড বিহেভিয়ার চেঞ্জ অফিসার মনজুর আহমেদ।
প্রধান অতিথি মো. আবু জাফর উল্লেখ করেন, শিশুদের স্কুলে উপস্থিতি ও শারীরিক বিকাশে অসুস্থতা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। তাই টাইফয়েড টিকা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি টিকা রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্বও বলেন, যা ভবিষ্যতে সরকারের উপাত্ত ও শিশুদের টিকা সনদ ব্যবহারে সহায়ক হবে।
উন্মুক্ত আলোচনায় সাংবাদিকরা কমিউনিটি পর্যায়ে প্রচার, বিভাগীয় তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, ধর্মীয় স্থানগুলোতে টিকার গুরুত্ব প্রচার এবং মনিটরিং বাড়ানোর মত পরামর্শ দেন।
এ সময় জানানো হয়, ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী সব শিশুকে এক ডোজ টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিবি) দেওয়া হবে। ক্যাম্পেইন ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৪৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮২২ শিশুকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৮১ শিশুর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৬.৩৭ শতাংশ। টিকা কার্যক্রমে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮৫ শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। প্রতিবছর দেশে ৩ লাখ শিশু টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৬ হাজার শিশু মারা যায়। টাইফয়েড টিকা নেওয়ার মাধ্যমে এই রোগ ও জ্বর জনিত জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া টিকার কারণে গুটি বসন্ত, পোলিও, হেপাটাইটিস-বি, হাম-রুবেলা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং শিশুদের পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।
কর্মশালায় বিভিন্ন সুপারিশ ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বক্তারা নিশ্চিত করেন, জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে টিকা রেজিস্ট্রেশন না করা শিশুরাও টিকা পাবেন, যাতে ক্যাম্পেইন শতভাগ সফল হয়।
বিডি/এএন