অতিরিক্ত চাপ নয়, সহায়তাই কর্মীদের উন্নয়নের চাবিকাঠি

অতিরিক্ত চাপ নয়, সহায়তাই কর্মীদের উন্নয়নের চাবিকাঠি

The Business Daily

Published : ১১:৩৫, ১ আগস্ট ২০২৫

আজকের প্রতিযোগিতামূলক কর্মবাজারে কর্মীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল আদায়ের প্রবণতা বেড়েছে। তবে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠান যতটা লাভের আশায় থাকে, বাস্তবে তা অধিকাংশ সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও বিভিন্ন গবেষণা বলছে, দীর্ঘসময় অতিরিক্ত চাপে কাজ করলে কর্মীরা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হন—যেমন অবসাদ, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগে ঘাটতি ও সৃজনশীলতার অভাব। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জানায়, একটানা কাজ করলে কর্মদক্ষতা কমে যায় এবং ভুলের পরিমাণ বেড়ে যায়। মার্কিন গবেষণা অনুযায়ী, এক হাজার কর্মীর প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত চাপের ফলে বছরে গড়ে ৫.৩ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। অসুস্থতা ও অকার্যকর সময়ের হারও অনেকগুণ বেড়ে যায়। এই অবস্থার উত্তরণে প্রয়োজন চাপহীন, ভারসাম্যপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল কর্মপরিবেশ। সময়মতো কাজ শেষের পরিকল্পনা, ওভারটাইমের ভারসাম্য, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সৃজনশীলতার মূল্যায়ন—এসব পদক্ষেপ একটি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে পারে।

সর্বোপরি, কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করলেই প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। চাপ নয়, যত্ন এবং সহানুভূতিই দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিনিয়োগ। কর্মীদের মানসিক প্রশান্তি ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে রিফ্রেশমেন্ট প্যাকেজ: প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা ও বাস্তব উদ্যোগ ঃ আধুনিক অফিস-সংস্কৃতিতে কর্মীদের মানসিক চাপ ও ক্লান্তি কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ‘রিফ্রেশমেন্ট প্যাকেজ’ দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কারণ কর্মীরা শুধু একটি "কাজের মেশিন" নয়; তারা আবেগ-অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ, যাদের উৎসাহ, মনোবল ও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত—সুখী, বিশ্রামপ্রাপ্ত এবং মানসিকভাবে সজীব কর্মীরা তাদের কাজের প্রতি বেশি দায়বদ্ধ এবং দক্ষতা প্রদর্শনে সক্ষম হন।  রিফ্রেশমেন্ট প্যাকেজ হলো কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত বিশেষ সুবিধা বা কার্যক্রমের সমষ্টি। এটি হতে পারে ঘুরে আসার সুযোগ, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, নন-ওয়ার্ক একটিভিটি, বিনোদনমূলক আয়োজন বা গৃহস্থালি ভার লাঘবের উদ্যোগ। কেন প্রয়োজন: অফিসে একঘেয়েমি ও মানসিক চাপ হ্রাস, কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখা, অফিসের প্রতি অনুগত্য ও কর্মীর সন্তুষ্টি বাড়ানো, সহকর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি , কর্মীদের স্বাস্থ্য ও পরিবারজীবনের ভারসাম্য রক্ষা । 

 কী ধরনের রিফ্রেশমেন্ট প্যাকেজ দেওয়া যেতে পারে?  বার্ষিক রিট্রিট বা টিম ট্যুর বিবরণ: বছরে একবার দেশের কোনো দর্শনীয় স্থানে বা রিসোর্টে কর্মীদের নিয়ে যাওয়া। উপকারিতা: মানসিক প্রশান্তি, টিম বন্ডিং, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি।  ওয়ার্ক ফ্রম রিসোর্ট বা ওয়ার্কেশন সুবিধা বিবরণ: কয়েকদিন নির্দিষ্ট রিসোর্ট বা প্রকৃতিনির্ভর পরিবেশে থেকে কাজ করার সুযোগ। উপকারিতা: কাজ ও বিশ্রামের ভারসাম্য, ক্লান্তি হ্রাস।  সাপ্তাহিক বা মাসিক 'Wellness Day' বিবরণ: মাসে একদিন কর্মীদের জন্য যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, কাউন্সেলিং সেশন আয়োজন উপকারিতা: মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি। স্পোর্টস ও কালচারাল অ্যাক্টিভিটি বিবরণ: ইন্টারনাল ক্রিকেট/ফুটবল/ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, কবিতা পাঠ, সংগীতানুষ্ঠান। উপকারিতা: শারীরিক ফিটনেস, মনের আনন্দ, সহকর্মীদের মধ্যে বন্ধন।  ফ্যামিলি ডে বা কোম্পানি বার্ষিক মিলনমেলা বিবরণ: কর্মীদের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে একদিনের সামাজিক অনুষ্ঠান। উপকারিতা: কর্মীদের পারিবারিক জীবনের প্রতি প্রতিষ্ঠানের সম্মান ও সম্মিলিত বন্ধন।  ম্যান্টাল হেলথ সাপোর্ট ও কাউন্সেলিং  প্রফেশনাল সাইকোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা। উপকারিতা: কর্মীদের উদ্বেগ, হতাশা ও অবসাদ নিরসনে সহায়ক। 

ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক আওয়ার ও রিমোট ওয়ার্ক সুযোগ, বিবরণ: নির্ধারিত সময় নয়, কাজের ভিত্তিতে সময় বেছে নেওয়ার সুযোগ। উপকারিতা: পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য।  লাঞ্চ বা স্ন্যাকস সুবিধা, বিবরণ: বিনামূল্যে স্বাস্থ্যকর লাঞ্চ, চা-কফি, ফলমূলের সরবরাহ। উপকারিতা: কর্মীদের শারীরিক সুস্থতা ও মনোবল বাড়ানো।গৃহস্থালি সেবা প্যাকেজ  বিবরণ: নির্দিষ্ট কোম্পানি কর্মীদের জন্য ঘর পরিস্কার, কাপড় ধোয়া, ডেলিভারি সার্ভিস ইত্যাদির ডিসকাউন্ট।, উপকারিতা: কর্মীদের সময় সাশ্রয়, মানসিক চাপ হ্রাস।অনুপ্রেরণামূলক প্রশিক্ষণ ও স্কিল আপগ্রেড কোর্স বিবরণ: সফট স্কিল, ক্রিয়েটিভ রাইটিং, ফটোগ্রাফি, আর্ট ও ডিজাইনের কর্মশালা।, উপকারিতা: কর্মীদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত বিকাশ।উদ্যোগ বাস্তবায়নে করণীয়: কর্মীদের সঙ্গে জরিপ করে কোন প্যাকেজগুলো প্রয়োজন তা নির্ধারণ, বার্ষিক বাজেটে রিফ্রেশমেন্ট খাত অন্তর্ভুক্ত করা , এইচআর টিমের তত্ত্বাবধানে কার্যক্রম পরিচালনা, কার্যক্রমগুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের পরিকল্পনা করা । শুধু বেতন বাড়ানোই কর্মীদের প্রেরণার একমাত্র উপায় নয়।

একটি রিফ্রেশিং ও যত্নশীল কর্মপরিবেশ কর্মীদের শুধু খুশি করে না, বরং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের আনুগত্য ও উৎপাদনশীলতাও বহুগুণ বাড়ায়। তাই ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে অফিসকে হতে হবে শুধু কাজের জায়গা নয়, বরং একটি মানবিক ও সহানুভূতিশীল পরিসর। স্মরণে রাখার মতো বার্তা: "চাপ নয়, উৎসাহ দিন—কাজ নয়, মানসিক শান্তি দিন—তবেই মিলবে সেরা কর্মদক্ষতা।" প্রয়োজনে আপনি চাইলে এই প্রতিবেদনকে নিউজ ডেস্ক বা প্রেজেন্টেশনের জন্য সাজিয়েও দিতে পারি।

S

শেয়ার করুনঃ
Advertisement