বৃষ্টিভেজা ব্রঙ্কসে হাজারো মানুষের শ্রদ্ধায় বিদায় জানানো হলো নিহত এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা দিদারুল

বৃষ্টিভেজা ব্রঙ্কসে হাজারো মানুষের শ্রদ্ধায় বিদায় জানানো হলো নিহত এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা দিদারুল ছবি: সিএনএন

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০২:৪২, ৩ আগস্ট ২০২৫

এক শোকাবহ দুপুরে, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কস এলাকায় হাজারো মানুষ জমায়েত হয়েছিল এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের জানাজা ও শেষ বিদায়ে অংশ নিতে। বৃষ্টির মধ্যেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়েছিল সহকর্মী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পার্কচেস্টার জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় জানাজা। সেখান থেকেই তাঁর কফিনটি বের করা হয় ছয় পুলিশ কর্মকর্তার কাঁধে করে, যেখানে তাঁর মরদেহ মোড়ানো ছিল সবুজ, নীল ও সাদা রঙের এনওয়াইপিডি পতাকায়। সেই মুহূর্তে 'ট্যাপস' নামের শোক সংগীত বাজতে শুরু করলে, যেন আকাশও কান্নায় ভেঙে পড়ে — হঠাৎ করেই ভারী বর্ষণ শুরু হয়।

মাত্র ৩৬ বছর বয়সী এই পুলিশ কর্মকর্তা দুই সন্তানের জনক ছিলেন এবং তৃতীয় সন্তানের আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। পরিবারের একমাত্র সন্তান দিদারুল ইসলামের মৃত্যু তাঁর বাংলাদেশি অভিবাসী কমিউনিটিতে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।

Members of the NYPD and other law enforcement agencies lined the streets during the funeral procession, offering a salute for the slain officer.

নিহত পুলিশ কর্মকর্তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এনওয়াইপিডি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানাজার শোভাযাত্রার সময় রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্যালুট দেন।
ছবি: মাইকেল এম. সান্তিয়াগো / গেটি ইমেজেস

 

জানাজায় নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস, গভর্নর ক্যাথি হোচুল, এনওয়াইপিডির কমিশনার জেসিকা টিশসহ উপস্থিত ছিলেন অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। কমিশনার টিশ তাঁর বক্তৃতায় দিদারুল ইসলামকে ‘ডিটেকটিভ ফার্স্ট গ্রেড’ হিসেবে মরণোত্তর পদোন্নতি দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং তার স্ত্রীকে আলিঙ্গন করে সমবেদনা জানান।

“তাঁর জীবনের প্রতিটি কাজ ছিল পরিবার, মসজিদ, এই শহর এবং বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের জন্য কিছু গড়ে তোলার প্রয়াস,” বলেন কমিশনার টিশ। “তাঁর ঘড়ি থেমে গেলেও, প্রভাব অমর হয়ে থাকবে।”

দিদারুল ইসলাম ২০১৯ সালে স্কুল সেফটি এজেন্ট হিসেবে এনওয়াইপিডিতে যোগ দেন এবং ২০২১ সালে পূর্ণ পুলিশ কর্মকর্তা হন। তিনি ছিলেন তাঁর সহকর্মীদের জন্য নির্ভরতার প্রতীক — যে কাউকে শান্ত রাখতে পারতেন, ছিলেন বিনয়ী, স্থির এবং দায়িত্বশীল।

৪৭তম প্রিসিঙ্ক্টের কমান্ডিং অফিসার ডেপুটি ইনস্পেক্টর মুহাম্মদ আশরাফ বলেন, “তিনি কেবল একজন পুলিশ ছিলেন না, ছিলেন এই শহরের এবং বাংলাদেশের সন্তান, যে অভিবাসী হিসেবে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন এবং এই শহরকে নিরাপদ রাখতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।”

জানাজা শেষে হোয়াইট প্লেইনস রোড ধরে তাঁর কফিন বহনকারী সাদা রঙের গাড়ি চলতে থাকে, যেটিকে ঘিরে ছিল সারিবদ্ধ পুলিশ সদস্য ও সাধারণ মানুষ। আকাশপথে ওড়ানো হয় হেলিকপ্টারও।

দিদারুল ইসলামের ভগ্নিপতি ও এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা কামরুল হাসান পরিবারের পক্ষ থেকে বলেন, “তিনি ছিলেন আমার সেরা বন্ধু, আমার রক্ষাকর্তা। তিনি একজন দায়িত্বশীল বাবা, ভাই, চাচা এবং নেতৃস্থানীয় মানুষ ছিলেন। কেউ কিছু চাইলে, তাঁর মুখে ‘না’ ছিল না।”

কমিউনিটি নেতা ফয়সল আহমেদ বলেন, “আমাদের কমিউনিটির কেউ যখন এনওয়াইপিডি বা ফায়ার সার্ভিসে কাজ করেন, সেটা আমাদের জন্য গর্বের। আজ দিদারুল ইসলামের মৃত্যু আমাদের শোকস্তব্ধ করেছে, কিন্তু তাঁর সেবা আমাদের গর্বিত করেছে।”

শেষে, ইনস্পেক্টর আশরাফ সবাইকে ইসলামী বিশ্বাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেন— “নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি এবং নিশ্চয়ই তাঁর কাছেই ফিরে যাবো।”

তথ্যঃ সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইম্‌স 

বিষয়ঃ
শেয়ার করুনঃ
Advertisement