ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি, তবু বহাল বাণিজ্য

ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি, তবু বহাল বাণিজ্য

TheBusinessDaily

Published : ২১:৫০, ২৯ জুলাই ২০২৫

গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়, তখনই প্রশ্ন উঠছে—এই নিন্দাকারী অনেক দেশ কেন এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে কোটি কোটি ডলারের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে?
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ২৮টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একসঙ্গে বিবৃতি দিলেও, বাস্তবে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। এই দ্বৈত অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মী ও সমালোচকেরা।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৯ হাজার ৮২১ জন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৭ জন। জাতিসংঘসহ অনেক সংস্থা গাজায় দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের হুঁশিয়ারি দিলেও এখন পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো অর্থনৈতিক বা কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়নি।

বিশ্বের কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২৪ সালে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নরওয়ে ও স্লোভেনিয়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্সও ঘোষণা দিয়েছে যে তারা সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। ১৯৮৮ সালেই পোল্যান্ড, সাইপ্রাস ও মাল্টা স্বীকৃতি দিয়েছিল।
কিন্তু এসব দেশই একই সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে বিশাল পরিমাণের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য।

তথ্যভিত্তিক উন্মুক্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম Observatory of Economic Complexity (OEC)–এর ২০২৩ সালের তথ্যানুসারে, নিচের দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে বছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি আমদানি-রপ্তানি করে:

  • ফ্রান্স

  • বেলজিয়াম

  • আয়ারল্যান্ড

  • ইতালি

  • জাপান

  • নেদারল্যান্ডস

  • পোল্যান্ড

  • স্পেন

  • সুইজারল্যান্ড

  • যুক্তরাজ্য

এই দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে মূলত যেসব পণ্যে বাণিজ্য করছে তার মধ্যে রয়েছে—ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (চিপ), গাড়ি, টিকা, প্রসাধনী ও সুগন্ধি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ইসরায়েল থেকে আয়ারল্যান্ডে ২০২৩ সালে প্রায় ৩৫৮ কোটি ডলারের চিপ রপ্তানি হয়, যা দেশটির আমদানিকৃত ইসরায়েলি পণ্যের সর্বাধিক অংশ। অন্যদিকে ইতালি ২০২৩ সালে ইসরায়েলে প্রায় ৩৪৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে গাড়ির পরিমাণই ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। মুখে সমালোচনা, হাতে ব্যবসা সমালোচকেরা বলছেন, এসব দেশের রাজনৈতিক বিবৃতি কার্যত প্রতীকী হয়ে উঠেছে। তারা মানবিক সহানুভূতির কথা বললেও ইসরায়েলের প্রতি অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। এইসব দেশগুলোর ইসরায়েলের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করাই প্রমাণ করে—তারা বাণিজ্যিক স্বার্থকে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের চেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। দ্বৈত নীতির সমালোচনা এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশ্ন উঠছে—ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বা গণহত্যার অভিযোগ থাকলেও কেন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে না? যদিও রাশিয়া, ইরান বা উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব দ্রুত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, সেখানে ইসরায়েলের বেলায় দেখা যাচ্ছে একধরনের দ্বৈত মানদণ্ড। এই অবস্থায় শুধু বিবৃতি নয়, বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগের দাবি উঠছে বিশ্বব্যাপী। নয়তো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার চর্চা একপেশে হয়ে পড়বে—যা আন্তর্জাতিক আইন ও মূল্যবোধের ওপরই এক বড় আঘাত।

শেয়ার করুনঃ
Advertisement