সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল শহীদ হাদির একাডেমিক ফলাফল

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল শহীদ হাদির একাডেমিক ফলাফল ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১২:১৬, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

গত ১২ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি। উন্নত চিকিৎসার আশায় তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন এই তরুণ নেতা।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার আগে ওসমান হাদির জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি উঠে এসেছে তাঁর একাডেমিক সাফল্যের নানা দিক।

জানা যায়, শরিফ ওসমান হাদি ২০১০–১১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি অনার্সে ৩.৪৯ এবং মাস্টার্সে ৩.৫২ সিজিপিএ অর্জন করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আগেও শিক্ষাজীবনে মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন হাদি। ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী এনএস কামিল মাদ্রাসা থেকে তিনি দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দাখিলে তাঁর জিপিএ ছিল ৪.৭৫ এবং আলিম পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৫ অর্জন করেন।

পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও তিনি ছিলেন সমানভাবে সক্রিয়। বিতর্ক, আবৃত্তি ও উপস্থিত বক্তৃতায় অংশ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একাধিকবার পুরস্কার অর্জন করেন শরিফ ওসমান হাদি।

জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শ ও আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে বাংলাদেশ পরিচালনার স্বপ্নে ২০২৪ সালের আগস্টে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। তরুণ সমাজকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে গড়ে তোলেন ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারও।

মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গ করে সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন হওয়া এই বিপ্লবীর ব্যক্তিগত জীবনও ছিল বহুমাত্রিক। জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি ‘শরিফ ওসমান হাদি’ নামে পরিচিত হলেও তাঁর প্রকৃত নাম ছিল ওসমান গনি।

এর আগে তিনি ‘সীমান্ত শরিফ’ ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন। পরে প্রয়াত বাবা মাওলানা শরিফ আব্দুল হাদির নামানুসারে নিজেকে ‘শরিফ ওসমান হাদি’ হিসেবে পরিচিত করে তোলেন।

শিক্ষক পরিবারে জন্ম নেওয়া শরিফ ওসমান হাদির গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌরসভার খাসমহল এলাকায়। নলছিটি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ ও খাসমহল জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা শরিফ আব্দুল হাদি এবং গৃহিণী তাসলিমা হাদির ঘরে ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

পরিবারের আরও তিন সদস্য শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে বড় ভাই ড. আবু বকর ছিদ্দিক বরিশালের বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদের খতিব। ভাই-বোনদের মধ্যে চতুর্থ মাছুমা নলছিটি ইসলামি সিনিয়র মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

এ ছাড়া ভাই ওমর বিন হাদি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে সুগন্ধা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বড় বোন ফাতেমা বেগম ও তৃতীয় বোন ইয়াসমিন আক্তার গৃহিণী।

শরিফ ওসমান হাদির স্ত্রী রাবেয়া ইসলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তাঁদের সংসারে ৯ মাস বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি পেশাগত জীবনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সে কিছুদিন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি সাইফুর’স কোচিংয়ে সিনিয়র আইইএলটিএস ট্রেইনার হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে সেখানে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement