সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, আমরা কেবল আবেগই নয়, মানসিক সমস্যাও সঙ্গীর সঙ্গে অজান্তে ভাগাভাগি করতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক্সপ্লোরাটরি রিসার্চ অ্যান্ড হাইপোথিসিস ইন মেডিসিন’ সাময়িকে প্রকাশিত গবেষণায় ২৬৮ জন নতুন দম্পতির ওপর পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা গেছে, দম্পতির একজনের উদ্বেগ, বিষণ্ণতা বা অনিদ্রা অন্যজনের মধ্যেও সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে যেতে পারে।
গবেষণার শুরুতে যদি একজন মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন, মাত্র ছয় মাসের মধ্যে অসুস্থ সঙ্গীর প্রভাবে সুস্থ সঙ্গীও উদ্বেগ বা ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে পুরুষ সঙ্গীর মানসিক অবস্থা নারীর ওপর বেশি প্রভাব ফেলে।
গবেষকরা মনে করেন, এর পেছনে শুধু আবেগ নয়, শারীরবৃত্তীয় কারণও রয়েছে। দেখা গেছে, বিষণ্ণ ব্যক্তির শরীরে কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি সুস্থ সঙ্গীর শরীরেও বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থাকার ফলে দম্পতিদের মুখগহ্বরের ব্যাকটেরিয়ার ধরনও একে অপরের মতো হয়ে যায়, যা মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলে।
নিউইয়র্ক প্রেসবাইটেরিয়ান হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গেইল সাল্টজ এবং নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক থিয়া গালাঘারের মতে, সঙ্গীর মানসিক সমস্যা অন্যজনের ওপর প্রভাব ফেলার ধারণা দীর্ঘদিন থেকেই ছিল, তবে এই গবেষণা তা আরও শক্তিশালীভাবে প্রমাণ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অতিরিক্ত সহানুভূতি, সঙ্গীর আচরণগত পরিবর্তন এবং দৈনন্দিন রুটিনের প্রভাব মানসিক সমস্যা ছড়ানোর মূল কারণ। একজন সঙ্গী বিষণ্ণ থাকলে তার উদাসীনতা অন্যজনের আবেগীয় বন্ধনে চাপ তৈরি করে, যা অপরজনের ঘুম, খাওয়া-দাওয়া এবং কর্মক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তবে এই চক্র থেকে বের হওয়ার পথও বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সঙ্গীকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সীমারেখা তৈরি করা জরুরি। নিজেকে অতিরিক্ত আবেগে জড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, বিষণ্ণতা যেমন ছোঁয়াচে, তেমনি একজনের সুস্থতা ও ইতিবাচক জীবনযাত্রাও সঙ্গীর মধ্যে সুস্থতার প্রেরণা ছড়াতে পারে।
































