ওসমান হাদি হত্যার পেছনে ‘শাহীন চেয়ারম্যান’-এর নাম

ওসমান হাদি হত্যার পেছনে ‘শাহীন চেয়ারম্যান’-এর নাম ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১১:৫৬, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সম্মুখসারির সংগঠক এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা জড়িত—সে বিষয়ে তদন্তে একের পর এক নতুন তথ্য সামনে আসছে।

সংশ্লিষ্ট তদন্তে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, যিনি ‘শাহীন চেয়ারম্যান’ নামে পরিচিত। গোয়েন্দা সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী, অর্থের যোগান ও অস্ত্র সংগ্রহ—দুটো ক্ষেত্রেই তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, শাহীন চেয়ারম্যান একা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেননি। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সহযোগিতায় ছিলেন আরও কয়েকজন ব্যক্তি। প্রাথমিক তদন্তে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতার সম্পৃক্ততার তথ্যও পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন সন্দেহভাজনের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পর হামলাকারীদের ঢাকার বাইরে সীমান্তবর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ। এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, হামলার আগে ও পরে হত্যাকারীদের সঙ্গে তার একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছিল।

তদন্তে জড়িত কর্মকর্তারা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শরিফ ওসমান হাদির সক্রিয় ভূমিকা এবং গত বছরের ৫ আগস্টের পর তার ধারাবাহিক বক্তব্য ও রাজনৈতিক অবস্থান আওয়ামী লীগের ভেতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। দলটির অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে হাদিকে ‘গুরুতর ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটেই তাকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ছক তৈরি করা হয়।

শাহীন আহমেদের রাজনৈতিক পরিচিতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও তদন্তে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। তিনি দীর্ঘদিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নথিতে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের সময় সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে তিনি একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন আইনের আওতার বাইরে ছিলেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শাহীন চেয়ারম্যান সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যান। শুরুতে আত্মগোপনে থাকলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তদন্তে জানা গেছে, বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে দেশে থাকা ‘স্লিপার সেল’-এর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এগিয়ে নেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ কল ও খুদেবার্তার সূত্র ধরে শাহীন চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। একই সঙ্গে পলাতক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল হামিদের সঙ্গে হত্যাকারীদের যোগাযোগের তথ্যও পাওয়া গেছে। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, ভারতে অবস্থানরত কয়েকটি গ্রুপ অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঢাকায় থাকা সহযোগীদের কাজ সমন্বয় করছিল।

সূত্রগুলো আরও জানায়, এই মামলার তদন্তে সন্দেহভাজনের তালিকায় কয়েকজন রাজনীতিকের নামও এসেছে। তাদের ভূমিকা যাচাই করতে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি শাহীন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কেরানীগঞ্জের দুজন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সব দিক বিবেচনায় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, খুব শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব পরিকল্পনাকারীর পরিচয় স্পষ্ট হবে।’

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement