বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেছেন, একটি পুরোনো ও চিহ্নিত গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওসমান হাদি অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বলেন, এই কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিএনপি এই ঘটনার ঘোরতর নিন্দা জানাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কয়েকটি পত্রিকা অফিসে একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে। এতে কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন সরাসরি ঝুঁকির মুখে পড়ে। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নুরুল কবিরের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, পাশাপাশি ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর ও আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনাকে অত্যন্ত ঘৃণ্য ও ন্যাক্কারজনক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে একটি পুরোনো চিহ্নিত মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা ও নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে ধ্বংস করে দেশে ফ্যাসিবাদের নতুন একটি রূপ প্রতিষ্ঠা করাই এই অপশক্তির লক্ষ্য। সরকারের চোখের সামনেই এসব তৎপরতা চালানো হচ্ছে, অথচ জনগণ মনে করছে সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে দেশের সব রাজনৈতিক দল এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। সরকারকে চাপ দিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলার মতো ঘটনা আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করে তোলার গভীর ষড়যন্ত্র বলেই বিএনপি মনে করে।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শান্তিকামী জনগণের পক্ষ থেকে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই—এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে ধ্বংস হতে দেওয়া হবে না। এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হলে সব নৈরাজ্যবিরোধী রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, যার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, যে ঐক্যের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় নির্বাচনের পথ তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল, সেই ধারাবাহিকতায় আবারও সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি।
