আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদের গণভোটকে সামনে রেখে চলমান সরকারি প্রচার কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব প্রচার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) গণভোট–সংক্রান্ত জনসচেতনতা কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের সর্বত্র গণভোট ও নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের সরকারি প্রচার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই সনদের গণভোট উপলক্ষে এরই মধ্যে সারা দেশে ব্যাপক সরকারি প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। এ কর্মসূচিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়সহ মোট ১৯টি মন্ত্রণালয় অংশ নিচ্ছিল।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি বিএনপি সাত দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এদিকে, দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে খালেদা জিয়া নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন এবং দীর্ঘ সময় কারাবন্দি ছিলেন। সে সময় পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুযোগ না পাওয়ায় ধীরে ধীরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেলেও গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় তাকে সীমাবদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয়।
চিকিৎসার অভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যার অবনতি ঘটে। এর মধ্যেই ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন দেশব্যাপী গণআন্দোলনে রূপ নেয়। টানা ৩৫ দিনের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন।
পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি তিনি লন্ডনে যান। সেখানে ১১৭ দিন অবস্থানের পর গত ৬ মে দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। তখন তার স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হলেও দীর্ঘদিনের নানা রোগ, শারীরিক ও মানসিক ধকল এবং বয়সজনিত কারণে তিনি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েন। প্রায়ই তার অবস্থার অবনতি ঘটত এবং হাসপাতালে ভর্তি করতে হতো।
সবশেষ গত ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক মাসের কিছু বেশি সময় সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর শেষ পর্যন্ত তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।



























