স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তিন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সবাইকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)তে রাখা হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন— ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের নাঈমুল ইসলাম, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. মামুন এবং একই শিক্ষাবর্ষের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। নাঈমুল ইসলামের অবস্থা সবচেয়ে গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
গতকাল রাতেই পার্কভিউ হাসপাতালে মামুন ও সায়েমের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাদের ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে এবং এ সময়ের মধ্যে শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে।
মামুনের নাকে ও মুখে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে, কানের পর্দা ফেটে গেছে। তার পিছনে ব্রেইনের অংশে ধারালো বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, ফলে ব্রেইন হেম্পার হয়েছিল এবং তা অপারেশনের মাধ্যমে নিরসন করা হয়েছে। অপরদিকে সায়েমের মাথার মাঝ বরাবর কোপায় প্রচুর রক্তক্ষরণ ঘটেছে। অপারেশনের সময় তাকে ৭ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। সায়েমের অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়।
ঢাকায় চিকিৎসাধীন নাঈমুল ইসলামও গতকাল দুপুরে সংঘর্ষের সময় গুরুতর আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শিক্ষার্থী আহমেদ জুনাইদ জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় নাঈমুলকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়।
মামুনের সহপাঠী শাহাব উদ্দিন জানান, মামুনের ব্রেইনের উপরের ব্লাড-ক্লথ অপসারণের পর দেখা গেছে, হাড়ের টুকরো অংশ ঘিরে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। অপারেশনের সুবিধার্থে পুরো খুলি খুলে রাখা হয়েছে এবং আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ চলবে।
সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, অপারেশন প্রায় ৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছে। মামুনের মাথা থেকে ১৩ টুকরো হাড় বের করা হয়েছে, যা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সুস্থ হলে দুই মাস পর তার খুলি পুনরায় স্থাপন করা হবে।
পার্কভিউ হাসপাতালের জি.এম জানিয়েছেন, সায়েম ও মামুনের মধ্যে প্রথমে সায়েমের অপারেশন করা হয়। সায়েমের অবস্থা ভালো নয়, জ্ঞানের লেবেল এখনো ৬/৭ এ রয়েছে এবং তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন। অপরদিকে মামুন কিছুটা ভালো, তবে তিনি এখনও লাইফ সাপোর্টে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদ জানিয়েছেন, সায়েমের অবস্থা স্থিতিশীল নয় এবং তিনি লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করা হচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের কাছে। এক ছাত্রী ভবনে প্রবেশের সময় দারোয়ানের সঙ্গে তর্ক শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে তাকে মারধর করা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তিনি পালানোর চেষ্টা করেন। তখন স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া না পাওয়ায় সংঘর্ষের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।