ফটিকছড়িতে স্কুলছাত্র মাহিনকে ‘চোর সন্দেহে’ পিটিয়ে হত্যা

ফটিকছড়িতে স্কুলছাত্র মাহিনকে ‘চোর সন্দেহে’ পিটিয়ে হত্যা

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৭:১৩, ২৫ আগস্ট ২০২৫

‘চোর’ সন্দেহে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নের স্কুলছাত্র মো. রিহান উদ্দিন মাহিন (১৫) কে পিটিয়ে হত্যা মামলার ঘটনায় গ্রেফতার দুই আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের মোটা তার, লাঠি ও কিলঘুসি দিয়ে মারধরের ফলে মাহিনের মৃত্যু হয়েছে। মাহিনের মৃত্যু নিশ্চিত এবং অন্য দুজনকে আহত অবস্থায় ফেলে মারধরে অংশ নেওয়া লোকজন পালিয়ে যান।

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আহমদ জানান, গত শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোতাসিম বিল্লাহর আদালতে দুই আসামি আজাদ হোসেন (৩৬) ও মোহাম্মদ নোমান (৩৭) জবানবন্দি দেন। এর মধ্যে নোমান গ্রাম্য ডাক্তার ও আজাদ গাড়িচালক। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

নিহত মাহিনের মা খদিজা বেগম বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় পাঁচজনকে নাম উল্লেখ করে, আরও সাতজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আজাদ ও নোমানকে গ্রেফতার করে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামি আজাদ হোসেন জবানবন্দিতে বলেছেন, ছয় দিন আগে এলাকায় কিছু কবুতর চুরি হওয়ার অভিযোগে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মাহিনসহ তিনজনকে ধরার চেষ্টা করেন। ওই সময় আজাদ, ফাহাদ, ইমন, আনোয়ার, মুন্না ও শাওন ছিলেন। ধাওয়া করার পর কিশোররা পাশের বাড়ির ছাদে উঠে যান। পরে তাদের ধরে এলাকার একটি সেতুর সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে মাহিন মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন, নাজিম উদ্দিন ও তানভীরসহ অন্তত ৪০ জন মারধরে অংশ নেন। কারও হাতে ছিল লাঠি, কারও হাতে বিদ্যুতের তার, আবার কেউ কিলঘুসি দিয়ে আঘাত করেন। মারধরের এক পর্যায়ে মাহিনের জ্ঞান চলে যায়। নাক দিয়ে নিশ্বাস পরীক্ষা করার পর উপস্থিত পল্লিচিকিৎসক নোমান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সবাই পালিয়ে যায়।

আসামি মোহাম্মদ নোমানও জবানবন্দিতে মাহিনসহ তিনজনকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং মাহিনের মৃত্যুর তথ্য উপস্থিত সবাইকে জানিয়েছেন। তিনি অন্য অভিযুক্তদের নামও উল্লেখ করেছেন।

ওসি নুর আহমদ জানান, ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে এলাকায় কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। আসামিরা নিজেকে বাঁচাতে চুরি হয়েছে বলে দাবি করছে। পূর্বের কোনো বিরোধ ছাড়াই নাটক সাজিয়ে কিশোরদের পিটানো হয়েছে।

মামলার বাদী ও নিহত মাহিনের মা খদিজা বেগম বলেন, “ছেলেকে বেঁধে মারধর করা হচ্ছে শুনে সেখানে ছুটে গিয়েছিলাম। আমার ছেলে চোর নয়। বারবার বলার পরও তিনি আমার সামনে পিটিয়ে মারা হলো। পানি চাইছিল, তাও দেওয়া হয়নি। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।”

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement