ইউডি কেস বা অপমৃত্যুর মামলা কী?

Published : ১৫:৪১, ২৫ আগস্ট ২০২৪
অপমৃত্যু বা ইউডি। UD’র পুলিশি ভাষায় পূর্ণরূপ Unnatural Deth বা অস্বাভাবিক মৃত্যু। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় যে মামলা হয় সেটাই আইনি পরিভাষায় ইউডি মামলা প্রকৃতির নিয়মের বাহিরে যে সকল মৃত্যু সংঘটিত হয় সেই সকল মৃত্যুকে অস্বাভাবিক মৃত্যু (Unnatural Death) বলা হয়।
যেমন-গলায় ফাঁস দিয়ে কিংবা বিষপানে আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু, মাটি বা পাহাড়-চাপা পড়ে মৃত্যু, বন্যপ্রাণী বা পশুর আঘাতে মৃত্যু, বজ্রপাতে মৃত্যু, আগুনে পুড়ে মৃত্যু, মেশিনারিজ চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে মৃত্যু, উঁচু গাছ বা ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু ইত্যাদি অথবা সন্দেহজনক মৃত্যু হলে থানায় অপমৃত্যু হিসেবে অপমৃত্যু রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হয়। অপমৃত্যু মামলায় কাউকে দোষারোপ করা হয় না যতক্ষণ না তা খুন মামলায় (FIR) রূপান্তরিত করা হয়ে থাকে।
ইউডি বা অপমৃত্যুর মামলা হয় যেভাবে
পুলিশ কারো অস্বাভাবিক বা অপমৃত্যুর সংবাদ পেলে এবং ঐ মৃত্যুর বিষয়ে কেউ কোন সুষ্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া না গেলে, থানার পুলিশ কর্মকর্তা অপমৃত্যুর বিষয়টি থানায় ডায়রীভূক্ত (জিডি) করে আদালতকে অবহিত করবেন এবং ঘটনার তদন্ত করবেন। এই ধরণের অস্বাভাবিক ও অভিযোগবিহীন মৃত্যুর মামলাই ইউটি কেস বা অপমৃত্যুর মামলা।
ইউডি কেসের ঘটনা তদন্তের পর ঘটনার সাথে কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে, তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা পিআরবি'র ২৭৫ প্রবিধান অনুসারে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় ইউডি কেস'টা এখানেই নিষ্পত্তি করবেন।
আর যদি তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ঐ অস্বাভাবিক মৃত্যুর সাথে কারো বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা বা অভিযোগ পায়, তবে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা পিআরবি'র ১৭৩ ধারা মতে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন । আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হলে, ইউডি কেস বা অপমৃত্যুর মামলাটি জিআর/এসপিটি মামলায় রূপান্তর হয়ে বিচার কার্যক্রম চলবে ।
অপমৃত্যু মামলার পর পুলিশ সুরৎহাল রিপোর্ট (মৃতদেহের সর্বরূপ বর্ণনা, শরীরে বিদ্যমান সকল চিহ্ন সহ) পুলিশ অফিসার ও উপস্থিত ব্যক্তিগণ অথবা তাদের মধ্যে যারা রিপোর্টের বর্ণনা সম্পর্কে একমত হন, তারা রিপোর্টে স্বাক্ষর দান করেন।
মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে অথবা অন্য কোন কারণে এই সম্পর্কে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম সাপেক্ষে পুলিশ অফিসার ময়না তদন্তের জন্য লাশটি নিকটতম সিভিল সার্জন বা সরকার কর্তৃক এই উদ্দেশ্যে নিযুক্ত অন্য কোন যোগ্যতা সম্পন্ন চিকিৎসকের নিকট প্রেরণ করেন।
একজন অফিসার যদি পারিপার্শ্বিক অবস্থায় নিশ্চিত হন যে লোকটি আত্মহত্যাই করেছে বা লোকটির মৃত্যু সাপের কামরেই হয়েছে অর্থাৎ লোকটিকে কেউ খুন করেনি, সে ক্ষেত্রে তিনি চাইলে লাশ পোষ্ট মর্টেমের জন্য না পাঠিয়ে লাশের স্বজনদের দিয়ে দিতে পারেন।
ইউডি কেসের ঘটনা তদন্তের পর ঘটনার সাথে কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে, বা কেউ কারো বিরুদ্ধে খুনের বা অপরাধজনক নরহত্যার অভিযোগ না করলে (সাধারণ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে এটার প্রাকটিস আছে) তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা প্রবিধান অনুসারে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। আদালতের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় ইউডি কেস'টা এখানেই নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
এছাড়া কোনও অপমৃত্যুর ঘটনা রহস্যজনক মনে হলে তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা না করে তদন্ত শুরু করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন যে সময়ের মধ্যে আসবে সেই সময়ে মামলার গুরুত্ব অনেকটাই কমে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে আলামত। এ জন্য শুধু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের দিকে না তাকিয়ে অপমৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে কারো মৃত্যুর ক্ষেত্রে রুজু-কৃত অপমৃত্যু মামলার সুরৎহাল বা ইনকোয়েস্ট রিপোর্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রস্তুত করেন।
অপমৃত্যু মামলা যেভাবে খুন মামলায় রূপান্তর হয়:
অপমৃত্যু মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করার সময় যে সকল চিহ্ন, লক্ষণ দেখে অপমৃত্যু মামলা হত্যা মামলায় পরিণত হয়-
এক বা একাধিক আঘাতের চিহ্ন বা জখমের চিহ্ন, শরীরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন, গলায় কোন কিছুর দাগ, শরীরের কোন অংশ ফুলে যাওয়া, হাত পায়ে রশি দিয়ে বাঁধার চিহ্ন, গলায় রশির দাগ গোলাকার হওয়া, জিহ্বা বাহির হওয়া, মুখ দিয়ে লাল বের হওয়া, রক্তক্ষরণের চিহ্ন থাকা, চোখ বিস্ফোরিত হওয়া, মুখমন্ডলে অস্বাভাবিক ভাব থাকা ইত্যাদি। এই লক্ষণ দ্বারা ধারণা করা হয় যে হত্যা করার পর আত্মহত্যা হিসাবে সাজানো হয়েছে কিনা। এক্ষেত্রে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করতে ময়না তদন্তের জন্য লাশটি মর্গে প্রেরণ করতে হয়। ময়না তদন্তের রিপোর্টে থাকা ডাক্তারের মতামতের ভিত্তিতে অপমৃত্যুর মামলা খুন মামলায় রূপান্তরিত হয়।
বিডি/এন