ভাইয়ের সংসার চালাতেন কালাম, এক দুর্ঘটনায় নিভে গেল জীবন

ভাইয়ের সংসার চালাতেন কালাম, এক দুর্ঘটনায় নিভে গেল জীবন ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০২:১৫, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

রাজধানীর ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়া একটি বিয়ারিং প্যাডের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন আবুল কালাম (৩৫) নামের এক যুবক।

রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো এলাকা, আর শোকে ভেঙে পড়ে কালামের পরিবার।

দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা এখন স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া। স্বামীর পাঠানো টাকায় চলতো তাদের সংসার, আর একই সঙ্গে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠী গ্রামে থাকা বড় ভাইয়ের পরিবারও নির্ভরশীল ছিল তার ওপর। হঠাৎ করেই সেই ভরসা হারিয়ে এখন অনিশ্চয়তার অন্ধকারে দুটি পরিবার।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার মাত্র এক ঘণ্টা আগেই কালাম বাড়িতে ফোন করেছিলেন। বেলা ১১টার দিকে ভাবি আসমা বেগমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেছিলেন, “কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরব।” কিন্তু ভাগ্য যেন অন্য কিছুই লিখে রেখেছিল—ফার্মগেটের সেই বিয়ারিং প্যাডই কেড়ে নিল তার জীবন।

আবুল কালাম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠী গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল চোকদারের ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় বসবাস করতেন। রাজধানীর ফার্মগেটের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তিনি।

দুর্ঘটনার সময় দুপুর ১২টার দিকে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড তার মাথায় পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ভাবি আসমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সকালে কথা হইছিল, বলছিলাম বাড়ি চলে আসো। সে বলেছিল, কয়েক দিনের মধ্যেই আসব। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর শুনি—ও আর নেই!”

তিনি সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে বলেন, “আমাদের সংসারের হাল ও-ই ধরেছিল। এখন ওর বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, জানি না।”

চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া চোকদার বলেন, “কালাম ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী ছিল। সংসারের সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিল সে। হঠাৎ এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া অসম্ভব।”

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি জানার পর থেকেই যোগাযোগ করছি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবারটিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”

একটি বিয়ারিং প্যাডের পতন যেন কেড়ে নিল এক পরিবারের ভবিষ্যৎ, আর রেখে গেল অজস্র প্রশ্ন—নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এমন ব্যর্থতার দায় নেবে কে?

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement