রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে চাহিদার ২০ ভাগ টিকিট পাচ্ছে না মানুষ

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে চাহিদার ২০ ভাগ টিকিট পাচ্ছে না মানুষ ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২২:২৩, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

রেল পথে যাত্রা অনেক আরামদায়ক। সবার পছন্দের যাত্রা হলে টিকিট ভোগান্তির কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মানুষ রেল পথে ভ্রমণ না করে বাস বা অন্য কোন পরিবহনে ভ্রমণ করতে হয়।

প্রায় দেড়শত বছরের পুরোনো রেল স্টেশন রংপুর। বিভাগীয় রেল স্টেশন। বহু বছরের পুরানো রেল স্টেশন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

রেলযাত্রায় বাড়েনি ট্রেনের সংখ্যা। নানা কারণে নিত্যদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। মানুষের কাছে ট্রেনের টিকিট এখন যেন সোনার হরিণ। যাত্রী চাহিদার ২০ ভাগ টিকিটও দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। অনলাইন ও কাউন্টার দুই মাধ্যমেই টিকিট পেতে হয় যুদ্ধ করে। বিভাগীয় শহর রংপুর থেকে ঢাকাগামী একমাত্র ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেস।

এছাড়া কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস যাত্রাবিরতি দেয় রংপুরে। প্রতিদিন রংপুর এক্সপ্রেস ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস গড়ে সাড়ে ৬শ যাত্রী বহন করে। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে রংপুরের জন্য আসন সংখ্যা বরাদ্দ মাত্র ১৫৪টি। আর রংপুর এক্সপ্রেসে বরাদ্দ ১৯৯টি। দুটি ট্রেনেই টিকিট পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে উঠেছে।

‎যাত্রীরা বলেন, চাহিদার ২০ ভাগ টিকিটও দিতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। এতে দিন দিন বাড়ছে ভোগান্তি। সমস্যা সমাধানে ট্রেন ও বগির সংখ্যা বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের। ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে একবার মাত্র দায়সারাভাবে উন্নয়ন কাজ হয়েছিল ১৯৪৪ সালে।

এরপর শত বছর পেরিয়ে গেলেও বিভাগীয় শহর হিসেবে রংপুরের এই স্টেশনটির দৃশ্যমান আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। রংপুর থেকে রেলপথে ঢাকায় যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, সবসময় কষ্ট করে যাতায়াত করি। কাউন্টারে এলে বলে কোনো টিকিট নাই, অনলাইনে কাটেন।

আমার মতো সাধারণ মানুষ তো অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবে না। এসব বুঝি না। তা হলে কোথায় যাবো, কার কাছে টিকিট চাইব? আমাদের এই কষ্ট দেখার কেউ নাই। হাসান আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, রংপুরে রেলের কোনো বিভাগীয় কার্যক্রম নেই। আরও একটি ট্রেন বাড়িয়ে কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু করলে খুব ভাল হবে। নয়তো এই ভোগান্তি থেকেই যাবে।

শারমিন আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, রংপুরে যাত্রীদেও পদে পদে ভোগান্তি। স্টেশনের অবস্থাও বেহাল। নেই যাত্রী ছাউনি। পারাপারে নেই ফুটওভার ব্রিজ, দ্বিতীয় প্ল্যাটফর্মে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। এমনকি স্টেশনটির বাউন্ডারি ওয়ালও নেই। কাউন্টারে টিকিট পেতে কষ্ট করতে হয়।

অনলাইনে তো সমস্যার শেষ নেই। কবে রংপুর রেল স্টেশনের উন্নয়ন হবে, ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। অজানা কারণে আমরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছি। ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী মাহমুদুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে টিকিট কাটতেও নানা ভোগান্তি। আগেই বুকিং হয়ে যায়, নয়তো সিন্ডিকেট করে কেটে রাখে। কখনো কখনো নেটওয়ার্ক সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছি না।

রংপুরের সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের নানা দাবি থাকা সত্ত্বেও রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা হতাশ করেছে। রংপুর বিভাগ উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক ওয়াদুদ আলী বলেন, ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে একবার মাত্র দায়সারাভাবে উন্নয়ন কাজ হয়েছিল ১৯৪৪ সালে।

এরপর শত বছর পেরিয়ে গেলেও বিভাগীয় শহর হিসেবে রংপুরের এই স্টেশনটির দৃশ্যমান আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ‎পলাশ কান্তি নাগ বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয় বরাবরই উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য রেলকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, উত্তরের কোটি মানুষের ট্রেন যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন রংপুর। অন্য লাইনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন স্থাপন হলেও রংপুর সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমরা আর বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকতে চাই না। দ্রুত রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের সংস্কার করে আধুনিকায়ন করা, নূন্যতম আরও দুটি আন্তঃনগর ট্রেন বরাদ্দের দাবি জানানো হয়।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, দেশ যখন মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে, তখন উত্তরাঞ্চলের অন্যতম শহর রংপুরের রেলসেবা সীমাহীন দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই উদাসীন রেল কর্তৃপক্ষ।

এ অবস্থার অবসান হওয়ায় দরকার। রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল্লাাহ আল মামুন বলেন, রেলের টিকিট এখন অনলাইনেই কেটে নিতে হবে। ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট ১০ দিন আগে থেকে বিক্রি শুরু হয়।

যেহেতু শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে সেখানে রংপুরবাসীর জন্য আলাদা করে করার কিছু নেই। আমরা সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা হয়ত ব্যবস্থা নেবে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement