গাইবান্ধার চরাঞ্চলের কাশখড় ভূমিদস্যুদের দখলে, প্রকৃত মালিকরা বঞ্চিত

গাইবান্ধার চরাঞ্চলের কাশখড় ভূমিদস্যুদের দখলে, প্রকৃত মালিকরা বঞ্চিত ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২৩:২২, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

গাইবান্ধার সাঘাটা, ফুরছড়ি, গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চরের মানুষের জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে এক আশীর্বাদ নদীর বালুচর।

নদীকে কেন্দ্র করে জেগে উঠা চরে শরৎকালে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠে কাশবন। যা স্থানীয় অনেকের জীবনমান বদলে দিয়েছে। ভূমিদস্যুদের কারণে প্রকৃত জমির মালিকরা কাশবনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এলাকাবাসী বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা কাশফুলের জন্য আলাদাভাবে কোনো শ্রমই দিতে হয় না। চরের কাশখড় বিক্রি করে তাদের অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছে। চরাঞ্চলের মানুষ কাশখড় বিক্রি করে প্রতিবছর যে উপার্জন করেন, তা পরবর্তী সময়ে চাষাবাদ বা ব্যবসার কাজে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরে বসবাসকারী দুই—তিনটি গোষ্ঠীর কারণে অনেক প্রকৃত জমির মালিক নিজ জমির কাশখড় সংগ্রহ করতে পারছেন না। এসব গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের জমির কাশখড় তুলে নিয়ে বিক্রি করে দেন। আবার জমি দখলে রেখে চাষাবাদও করেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর বিভিন্ন চরে বেড়ে ওঠা কাশখড় এবং সাঘাটা, ফুরছড়ি, গাইবান্ধা সদর উপজেলা বিভিন্ন চরে বেড়ে ওঠা কাশখড় এখন আমদানি করা হচ্ছে জেলার বাইরে রাজশাহী ও বরিশালে।

অনেকে চরের জমির মালিকানা দাবি করে আবার কেউ কেউ গায়ের জোরে প্রভাব খাটিয়ে প্রকৃতির এই দান কাশখড় তুলে নিচ্ছেন করে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত চরে ভূমিদস্যুদের সঙ্গে প্রকৃত জমির মালিকাদের বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রশাসনের চেষ্টা থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতায় দুর্গম চরাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা উন্নত রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সুন্দরগঞ্জের অঞ্চলের আলোচিত চর এলাকা কাপাসিয়া ইউনিয়নের মিন্টু মিয়ার চরের জমির মালিক রাশিদুল ইসলাম বলেন, গত ৫ বছর হলো ওই চরে তাদের ১০০ বিঘা জমি জেগে উঠেছে।

তখন থেকে চরের ভূমিদস্যুরা তাদের জমি দখলে রেখেছে। সেখান থেকে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাশখড় বিক্রি করে দিচ্ছে তারা। জমির মালিক হয়েও সেটা তারা ভোগ পাচ্ছে না। এছাড়া ওই জমি দখলে রেখে তরমুজ, বাদাম এবং কুমড়া চাষ করে বছরজুড়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন ভূমিদস্যুরা। ভূমিদস্যু

দের নিয়ন্ত্রণে থাকে সেখানকার অধিকাংশ জমি। কাপাসিয়ার বাদামের চরের আনছার আলী বলেন, বালুচরের জমিতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাশখড় বিক্রি করে এখন অনেকে স্বাবলম্বী।

ব্যবসায়ীরা এসব কাশখড় ক্রয় করে নিয়ে রাজশাহী ও বরিশালে রপ্তানি করছেন। প্রকৃত জমির মালিকরা ভূমিদস্যুদের কারণে এ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হরিপুর ইউনিয়নের কাশখড় ব্যবসায়ী মাহবুর রহমান বলেন, কাশখড় ট্রাকে করে রাজশাহী ও বরিশালে পাঠানো হয়। এ

ক ট্রাক কাশখড় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ভাড়া বাবদ  খরচ হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। প্রতি ট্রাকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ হয়। কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া বলেন, বিনাচাষে তিস্তার চরে বেড়ে উঠা কাশখড় বিক্রি করে এখন অনেকেই ভালো উপার্জন করছেন।

কাশখড় যেন চরবাসীর জন্য আশীর্বাদ। ২৫ থেকে ৩৫ বছর আগে তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া অনেক জমি এখন জেগে উঠেছে। সেই সব চরে এখন কাশফুলসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। জমি হারানো পরিবারগুলো তাদের বাপ—দাদার ভিটামাটি সহসাই ফিরে পাচ্ছে না।

নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে করতে জমির দখল চলে যাচ্ছে ভূমি দস্যুদের হাতে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির বলেন, কাশফুলের খড় চরবাসীর উপার্জনের এক উৎস। এসব কাশখড় পানের বরজ, ঘরের ছাউনি এবং বিনোদন কেন্দ্রের গোলঘরে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কাশফুল দিয়ে ঝাড়ু তৈরি করা হয়। সুন্দরগঞ্জ থানা সুত্রে জানা যায়, মাঝেমধ্যে চরের জমি নিয়ে বিরোধের অভিযোগ পাওয়া যায়। দুর্গম চরাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশের জন্য অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারপরও সাধ্যমতো চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, চরের জমি নিয়ে অনেক জটিলতা রয়েছে। অনেকের জমি খাস খতিয়ানে চলে গেছে। তাছাড়া প্রকৃত মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তারপরও অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement