আওয়ামী লীগ নেতার অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়, বাস্তবে নেই অস্তিত্ব

আওয়ামী লীগ নেতার অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়, বাস্তবে নেই অস্তিত্ব

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৩:৪৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে দেশের ১১৩তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কুষ্টিয়া হাউজিং স্টেটের ৬ ও ৭ নম্বর প্লটে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিল। তবে বাস্তবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব ছিল না

 ক্ষমতার দাপটে হানিফ স্ত্রী ফৌজিয়া আলমের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইসেন্স নেন। ট্রাস্টি বোর্ডে নিজেও ছিলেন সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় ‘লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়’। অনুমোদন সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় চালু করতে পারেননি হানিফ।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশে আলোচিত নেতা হানিফ ভারতে পালিয়ে যান। ভারতে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করার জন্য তিনি নানা কৌশল অবলম্বন করেন। মঞ্জুরি কমিশন থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের পরিবর্তন, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এবং শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন—all ভারতে বসেই সম্পন্ন করেন। চলতি বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি বিভাগে শিক্ষক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর জানায়, ২০২৪ সালের অক্টোবরে মঞ্জুরি কমিশন থেকে ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করা হয়। নভেম্বরে কার্যক্রম শুরু হয়। ২৪ জন শিক্ষক ও ৩৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাঁচ বিভাগের মোট ১০১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন, প্রতি বিভাগে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থীকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ভারতে বসে বিশ্ববিদ্যালয় চালুর জন্য হানিফ ট্রাস্টি বোর্ডে নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন। স্ত্রীর নাম বাদ দিয়ে হালিমুজ্জামানকে চেয়ারম্যান করেন। ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের সময় ট্রাস্টি বোর্ডে হানিফ ও স্ত্রী ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন হানিফের আস্থাভাজন হেলথকেয়ার ফার্মার সিইও হালিমুজ্জামান। সেক্রেটারি ছিলেন আর্কিটেক্ট তারিক হাসান, কোষাধ্যক্ষ ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান। সদস্য ছিলেন ইবির আইন বিভাগের অধ্যাপক সেলিম তোহা ও গার্মেন্ট মালিক আব্দুল মান্নান।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি এক শিক্ষকনেতাকে উপাচার্য নিয়োগের চেষ্টা চলছে। মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো ৩ জনের প্যানেলে রয়েছেন ফারুকুজ্জামান, আক্তারুজ্জামান ও শরিফুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের ক্ষেত্রেও নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে। ২০২৩ সালে কুষ্টিয়ার হাউজিং স্টেটের ৬ ও ৭ নম্বর প্লটে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার নির্মাণাধীন বাড়ির ঠিকানায় অনুমোদন নেওয়া হয়। পরবর্তীতে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হলে সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়। ক্ষমতার দাপটে জেলা পরিষদের নবম তলায় ডিজাইন পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু করেন হানিফ।

বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান জানান, হানিফ ও তার স্ত্রী এখন ট্রাস্টি বোর্ডে নেই এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো ভূমিকা নেই। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement