যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পত্তি বিক্রির হিড়িক

যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পত্তি বিক্রির হিড়িক

The Business Daily

Published : ১৮:৪২, ২০ জুলাই ২০২৫

দ্য গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের এক বছর পূর্ণ হতে না হতেই যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিলাসবহুল সম্পত্তি লেনদেন, হস্তান্তর ও পুনঃঋণায়নের হিড়িক শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর যৌথ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ঢাকায় ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এরপর সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক মন্ত্রী, এমপি ও ব্যবসায়ী যুক্তরাজ্যে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।

একই সময়ে যুক্তরাজ্যের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে এইসব ব্যক্তিদের অর্থপাচারের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির তদন্ত ও জব্দ কার্যক্রম শুরু করে। বড় অঙ্কের সম্পত্তি জব্দ ২০২৫ সালের মে মাসে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজার মালিকানাধীন লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কয়ারের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট জব্দ করে, যার মূল্য প্রায় ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ১,৪৬৯ কোটি টাকা)। এরপরই সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ৩০০-এর বেশি সম্পত্তি, যার সম্মিলিত মূল্য প্রায় ২,৭৭৬ কোটি টাকা, যুক্তরাজ্যে জব্দ হয়। লেনদেন ও রিফাইন্যান্সের চেষ্টা দ্য গার্ডিয়ান জানায়, যুক্তরাজ্যের জমি নিবন্ধন দপ্তরে গত এক বছরে অন্তত ২০টি সম্পত্তি লেনদেনের আবেদন জমা পড়ে। বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান লন্ডনের নাইটসব্রিজে একটি চারতলা বাড়ি ৭.৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডে এক অজ্ঞাত কোম্পানির কাছে হস্তান্তর ও বিক্রি করেছেন। 

 তার ভাই শাফিয়াত সোবহান সারে’র ভার্জিনিয়া ওয়াটারে ৮ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি প্রাসাদোপম বাড়ির লেনদেন করেন। সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান রিজেন্টস পার্কে ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি টাউনহাউস বিক্রি করেন এবং আরও তিনটি রিফাইন্যান্স আবেদন জমা দেন।  ব্যাখ্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার অভিযোগ সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

” বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব সম্পত্তি যেন হস্তান্তর, বিক্রি কিংবা বন্ধক না রাখা হয়। গভর্নর মনসুর বলেন, “আমরা নিশ্চিত যে অনেকে ইতিমধ্যে সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করছেন, তাই আরও জোরালোভাবে সম্পদ ফ্রিজ করা জরুরি।” ব্রিটেনের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন করাপশনের প্রধান জো পাওয়েল বলেন, “যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, এসব সম্পদ হারিয়ে যাবে। লন্ডন যেন দুর্নীতির স্বর্গ না হয়ে ওঠে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

” আইনজীবী ও পরামর্শকদের ভূমিকায় প্রশ্ন তদন্তে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এসব সম্পদ লেনদেনে যুক্তরাজ্যের আইনজীবী ও আর্থিক পরামর্শদাতারা যথাযথ যাচাই-বাছাই করেছেন কি না। তাদের দায়িত্ব ও সতর্কতা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অনুসন্ধান কেবল বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাজ্যের দায়বদ্ধতারও একটি বড় পরীক্ষা।
যুক্তরাজ্যের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গার্ডিয়ান-ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য বিশ্লেষণ করে এখন আরও তৎপর হয়েছে।

 

S

শেয়ার করুনঃ
Advertisement