বাংলাদেশের বর্ষাকাল মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক বিস্ময়কর পুনরুজ্জীবন। এ সময় গ্রামবাংলার পুকুর, বিল, খাল ও জলাভূমি জুড়ে বিস্তৃত হয় পদ্ম ও শাপলার মনকাড়া উপস্থিতি। কখনও লাল, কখনও সাদা আবার কখনও ঘিয়ে রঙা এই ফুলগুলো একদিকে যেমন চোখ জুড়িয়ে দেয়, অন্যদিকে তেমনি মানুষের জীবনের সাথে গড়ে তোলে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক।
গ্রামীণ শিশু–কিশোরদের কাছে জলাশয়ের ফুল মানে খেলা, কল্পনা আর আনন্দের রঙিন মুহূর্ত। তারা দল বেঁধে নেমে পড়ে জলাশয়ে। কেউ তোলে ফুল, কেউ গাঁথে মালা, কেউবা আবার বাঁধে শাপলার নৌকা। এই সময়টাতে পদ্ম ও শাপলা শুধু ফুল নয়—হয়ে ওঠে তাদের খেলার সাথি, তাদের শৈশবের এক অংশ।
জলাশয়ের পদ্ম ও শাপলা ফুলের একটি অর্থনৈতিক দিকও আছে। গ্রামের অনেক নারী–পুরুষ প্রতিদিন সকালে জলাশয় থেকে ফুল তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। শহরের মানুষ এই ফুল কিনে ঘরের শোভা বাড়ান কিংবা প্রিয়জনকে উপহার দেন। আবার কেউ রাস্তায় হাঁটার সময় হঠাৎ থেমে যান কোনো এক অচেনা জলাশয়ের ধারে—দেখেন পদ্মফুলের ঝিলিক, কিংবা তুলেন মোবাইল ফোনে ছবি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব জলজ ফুলের ছবি এখন ভীষণ জনপ্রিয়। অনেকেই ভোরের আলো বা সোনালি বিকেলে পদ্ম বা শাপলার মাঝে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। পেশাদার আলোকচিত্রীরাও বর্ষাকালে গ্রামীণ এলাকায় ছুটে যান জলাশয়ের সৌন্দর্য ধারণ করতে।
এদিকে পদ্ম ও শাপলা শুধু শোভাময় ফুল নয়, এদের রয়েছে সাংস্কৃতিক ও প্রতীকী গুরুত্বও। শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল—এটি শান্তি, ঐতিহ্য ও পরিচয়ের প্রতীক। আর পদ্ম বহু ধর্ম ও সাহিত্যকথায় পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে স্থান পেয়েছে।
বর্ষাকালের এই জলজ ফুলগুলো তাই শুধু প্রকৃতির রূপ নয়, তারা হয়ে উঠেছে মানুষের স্মৃতি, আবেগ, জীবিকার উৎস এবং শিল্প–সাহিত্যের অবিনাশী অনুপ্রেরণা। পদ্ম ও শাপলা মিলিয়ে গড়ে তোলে বর্ষার এক অনন্য রঙিন ভাষা—যা কথা বলে নিঃশব্দে, সৌন্দর্যে ও অনুভবে ।