গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত তিনজনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত তিনজনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন

The Business Daily

Published : ১৭:৪৫, ২১ জুলাই ২০২৫

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঘোষিত ‘জুলাই পদযাত্রা’কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত তিনজনের লাশ আজ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। নিহতরা হলেন—রমজান কাজী (১৮), ইমন তালুকদার (১৮) ও সোহেল রানা মোল্লা (৩৫)। আদালতের নির্দেশে তাঁদের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।লাশ উত্তোলনের সময় প্রশাসনের উপস্থিতি - সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে প্রথম দফায় গোপালগঞ্জ পৌরসভার গেটপাড়া কবরস্থান থেকে রমজান ও ইমনের লাশ উত্তোলন করা হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সি ও রন্টি পোদ্দার, সদর থানা-পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে দুপুর ৩টার দিকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পারিবারিক কবরস্থান থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফ দস্তগীরের উপস্থিতিতে সোহেল রানা মোল্লার লাশ উত্তোলন করা হয়। কীভাবে ঘটনার সূত্রপাতঃ গত ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচি ‘জুলাই পদযাত্রা’ (যেটিকে দলটির নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'মার্চ টু গোপালগঞ্জ' নামে প্রচার করছিলেন) কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়। পুলিশ প্রশাসন পূর্বেই কর্মসূচির অনুমতি না দেওয়ায় মাঠে এনসিপি কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন না।

তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা শহরে অবস্থান নেন। পরে এক পর্যায়ে গেটপাড়া ও আশপাশের এলাকায় এনসিপি সমর্থক ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। চলে গুলি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে রমজান, ইমন ও সোহেলসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। লাশ দাফন ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়াঃ এ ঘটনার পর নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে দাফন করা হয়। এমনকি পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্টও করেনি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে ১৯ জুলাই নিহতদের পরিবার থেকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২০ জুলাই) গোপালগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রোমানা রোজী তিনজনের লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। বাকি দুইজনের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্যঃ ঘটনায় মোট চারজন নিহত হলেও একজন নিহত ব্যক্তি—দীপ্ত সাহা—হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তাঁকে দাহ করা হয়। ফলে তাঁর ময়নাতদন্ত আর সম্ভব নয়।

অপরজন আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এবং সেখানেই তাঁর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পুলিশের বক্তব্যঃ গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বলেন, “১৬ জুলাই সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহতদের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। পরে হত্যামামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে আজ তিনজনের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে।” রাজনীতি ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। এনসিপি দাবি করছে, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অনুমতি না থাকা কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনায় যথাযথ তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে লাশ দাফনের ঘটনা গুরুতর আইন লঙ্ঘনের শামিল।

এখন যেহেতু ময়নাতদন্ত হচ্ছে, সঠিক তথ্য উদ্ঘাটন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। উল্লেখযোগ্য বিষয়: নিহতদের পরিবার বলছে, তাঁরা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেনঘটনাস্থলে এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছেগোপালগঞ্জের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে ব্যাপক উত্তেজনা । বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

S

শেয়ার করুনঃ
Advertisement