সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি মন্তব্য করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার উপদেষ্টারা বর্তমানে বেশ অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে আছেন।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছের মানুষ, সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে এখন এক ধরনের ভয়, অনিশ্চয়তা এবং অস্বস্তি বিরাজ করছে। কারণ গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে বিএনপির অনেকেই সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। এমনকি শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল। জামায়াতের নেতাদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যেত।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান ইউনূস সরকারের সঙ্গে যারা জড়িত, বিশেষ করে যারা ঐক্যমত কমিশনে নিয়মিত যাচ্ছেন, যমুনাতে নিয়মিত দাওয়াত পাচ্ছেন, কিংবা ড. ইউনূসের অতিথি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে এখন তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক বেশি গভীর হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগ আমলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের যে সম্পর্ক ছিল তার চেয়েও শক্তিশালী।”
রনির ভাষায়, “উপদেষ্টাদের মধ্যেই কয়েকটি ভাগ তৈরি হয়েছে। কেউ আন্তরিকভাবে ড. ইউনূসকে সমর্থন করছেন, আবার কেউ মার্কিন লবির সঙ্গে, কেউ পাকিস্তানি লবি কিংবা ভারতীয় লবির সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ। এসব কারণে উপদেষ্টাদের মধ্যে টানাপোড়েন, হতাশা এবং দরকষাকষি চলছে। অনেকে আবার সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেশি ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন, ফলে সেখানে এক ধরনের রসায়ন তৈরি হয়েছে।”
তিনি যোগ করেন, “ড. ইউনূসের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কিছু উপদেষ্টা দিনরাত তার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছেন। কিন্তু এর ফলে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক শীতল হয়ে গেছে, অনেক ক্ষেত্রে তা দা-কুমড়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে উপদেষ্টা মহলে অস্থিরতা বাড়ছে। অন্যদিকে প্রশাসন ও বিচার বিভাগে সাম্প্রতিক নিয়োগ ও বদলি নিয়ে সচিবালয়ে প্রায় প্রতিদিনই বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হচ্ছে।”
গোলাম মাওলা রনি অভিযোগ করেন, “উচ্চপদস্থ পদগুলো ঘিরে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। একটি ডিসি পদেই ৩০-৩২ কোটি টাকার লেনদেনের কথা শোনা যাচ্ছে। যারা এতে জড়িত তারা এখন একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পড়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে যারা শত কোটি টাকা খরচ করে পদ পেয়েছেন, তাদের সে বিনিয়োগ ফেরত আনা সম্ভব নয়। তাই তারা মরিয়া হয়ে উঠবেন ইউনূস সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “এসব কারণে ড. ইউনূসের শুভানুধ্যায়ীরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন। হতাশা, ক্ষোভ আর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন সকলে। ফলে ড. ইউনূস নিজেও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন, কাকে বিশ্বাস করবেন, কাকে ভরসা করবেন, কে তাকে ভবিষ্যতে টিকিয়ে রাখবে, কে দেশ ও জাতির জন্য, এমনকি তার নিজের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনবে, তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। তার এই হতাশা এখন তার ঘনিষ্ঠদের মনে এক ধরনের মহামারির মতো প্রভাব ফেলছে।”