তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ধারণা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও দীর্ঘদিনের সাজানো হামলা।
কারণ, হামলার ঠিক আগের রাতে ফয়সাল ও আলমগীরের জন্য সাভারের আশুলিয়ার একটি রিসোর্টে বিশেষ আয়োজন করে রাখে মূল পরিকল্পনাকারীরা। সেখানে তাদের জন্য বিনোদনমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি দুজন নারী সঙ্গীকেও রাখা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার রাতে হামলাকারীরা ওই রিসোর্টে অবস্থান করেন। পরদিন শুক্রবার সকাল প্রায় ৮টার দিকে তারা রিসোর্ট ছাড়েন এবং ঢাকায় প্রবেশ করেন। এরপর জুমার নামাজ শেষে হাদিকে অনুসরণ করে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। গোয়েন্দা সূত্র এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গত রোববার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের মামলার বাদী হন। মামলায় ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুলসহ আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
ডিএমপি গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, পল্টন থানায় দায়ের হওয়া মামলাটির তদন্ত বর্তমানে ডিবি পুলিশ পরিচালনা করছে। ডিবি সূত্র জানায়, সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা এই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুটার ফয়সাল করিমের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
রিমান্ডে নেওয়া ব্যক্তিরা হলেন—ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তার শ্যালক শিপু এবং রিসোর্টে অবস্থানকারী বান্ধবী মারিয়া। পুলিশ তাদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলেও শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আবদুল হান্নানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই হামলাকারী ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদ খান এবং আলমগীরকে সীমান্ত পার করে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে আরও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
শেরপুরের বারোমারি সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ পারাপারে সহায়তার অভিযোগে ফিলিপের মামাশ্বশুর বেঞ্জামিন চিড়ান (৪৫) এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সীশল (২৮)–কে আটক করে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর আগে ফিলিপের স্ত্রী ডেলটা চিড়ান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং আরেক সহযোগী লুইস লেংমিঞ্জাকেও আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের কথা জানায় বিজিবি।
পুলিশের হেফাজতে আরও রয়েছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত এলাকার পাচার চক্রের সদস্য সিবিয়ন দিও ও সঞ্জয় চিসিম। তবে সাভার থেকে আটক হওয়া আলমগীরের দুই বন্ধু হাবিবুর রহমান ও মিলনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, বিজিবির হাতে আটক ব্যক্তিদের এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না মিললে তাদেরও ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
এদিকে, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় শুটার ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবিরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। র্যাবের পাঠানো একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কবির হাদির আশপাশের এলাকাতেই বসবাস করতেন। তবে এই হত্যাচেষ্টার পেছনে কবিরের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা কী ছিল, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি র্যাব।




























