ডিম কেন ছোড়া হয় প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে?

ডিম কেন ছোড়া হয় প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে? ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৭:৪৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডিম-খাওয়ার টেবিলের একেবারেই সাধারণ খাদ্য হলেও রাজনীতি ও প্রতিবাদের ময়দানে এটি বহুদিন ধরেই প্রতীকী অস্ত্রের ভূমিকা পালন করছে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, নানা সময় রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশে মানুষ ডিমকে ব্যবহার করেছে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চেও ডিম নিক্ষেপের এমন প্রবণতা চোখে পড়ছে।

কয়েক দিন আগে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে বহনকারী প্রিজন ভ্যানে ডিম ছুড়ে মারেন। এতে গাড়ির সামনের কাচ ডিমে ভরে যায়।

এই প্রসঙ্গে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গেলম্যান জানান, “খাবার দিয়ে প্রতিবাদ করার পেছনে যুক্তি হলো, এগুলো সস্তা, সহজলভ্য এবং সহজে দৃষ্টি কাড়ে।”

তিনি আরও বলেন, টমেটো হালকা ও সস্তা হওয়ায় সহজেই ছোড়া যায় এবং ফেটে গেলে প্রতিবাদকারীদের এক ধরনের আত্মতৃপ্তি দেয়। একইভাবে ডিমও ফেটে গিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে, যা প্রতীকীভাবে প্রতিবাদকে আরও দৃশ্যমান করে তোলে।

গেলম্যানের মতে, খাবার ছুড়ে মারাকে সাধারণত অহিংস প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হয়। যেমন—পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়লে গুলি চলতে পারে, কিন্তু ডিম বা টমেটো মারলে সেই প্রতিক্রিয়া অনেকটা হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। ফলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিবাদের আলাদা প্রতীকী মূল্য তৈরি করে।

তবে এ ধরণের প্রতিবাদ নতুন নয়। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। কথিত আছে, মধ্যযুগে শাস্তি হিসেবে বন্দীদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হতো। লিখিত ইতিহাসে প্রথম এ ধরনের উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮শ শতকে।

ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মাঝে অবস্থিত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ‘আইল অব ম্যান’-এ মেথোডিস্টদের ওপর ডিম ছোড়ার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। আবার ১৮৩৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকর্ড শহরে দাসপ্রথা বিরোধী বক্তব্য দেওয়ার সময় কবি জর্জ হোয়াইটকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজ ১৯১৭ সালে কনস্ক্রিপশনবিরোধী আন্দোলনের উত্তাপে জনসভায় ডিমের আঘাত পান। এ ঘটনা দেশজুড়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করে।

ব্রিটেনেও ২০০১ সালে ডিম ছোড়া নিয়ে বড় আলোচনার জন্ম হয়, যখন উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকট এক তরুণ কৃষকের নিক্ষেপ করা ডিম খেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ঘুষি ছুঁড়ে দেন। মুহূর্তটির ছবি সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমান যুগেও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ডিম নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন। যেমন—২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় গভর্নর পদে প্রার্থী থাকা অবস্থায় আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের দিকে ডিম ছোড়া হয়, যদিও তিনি সিনেমার নায়কের মতোই নির্বিকার ভঙ্গিতে তা সামাল দেন।

২০০৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ডিম নিক্ষেপে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ২০১১ সালে আফগান বিক্ষোভকারীরা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানি কনস্যুলেটকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়ে।

২০১৩ সালে লন্ডনে বিক্ষোভকারীরা প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের কফিনে ডিম ছোড়ার হুমকি দিয়েছিল, যদিও কঠোর নিরাপত্তার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

একই বছর ফরাসি কৃষকরাও ডিমকে প্রতিবাদের হাতিয়ার বানান। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে তারা টানা এক সপ্তাহ প্রতিদিন রাস্তায় ১ লাখ ডিম ভাঙার শপথ করেছিলেন।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement