জাতীয় পার্টি একক প্রার্থী দিবে ৩শত আসনে, রংপুর বিভাগের ৩৩ প্রার্থী প্রায় চুড়ান্ত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইতিমধ্যে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এজন্য রংপুরের শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় ডেকে নেওয়া হয়েছে। তাদের নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরের অংশের কো-চেয়ারম্যান ও তিন জন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং সারা দেশে সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের সবকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিন দিন ঢাকায় অবস্থান করেছে রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা। কয়েকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলার আহ্বায়ক আজমল হোসেন বলেন, জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইতিমধ্যে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের বাছাই করে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। তার মধ্যে রংপুর-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও গাইবান্ধা-১ আসনে মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী নির্বাচন করবেন।

নির্বাচনী প্রচারে সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে এবং নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবে আশা প্রকাশ করে আজমল হোসেন বলেন, যদি নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও প্রচারণাসহ সব ধরনের সুযোগ নিশ্চিত করতে না পারে, তা হলে বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হবে।

রংপুর বিভাগে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সব ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে ভালো ফল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে একই কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির রংপুর জেলা শাখার সদস্যসচিব আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। রংপুরের ছয়টি আসনের দুটিতে নতুন প্রার্থী থাকবে। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে জনপ্রিয় এক ব্যারিস্টারকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বিভাগের সবকটি আসনে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে ২২টি আসন একসময় জাপার দখলে ছিল। সেগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও সিলেট বিভাগে দল থেকে ভালো ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী থাকবে। রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জয়ী হতে পারে এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী করা হবে। ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি, এটা নিশ্চিত।

তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও তৈরি হয়নি। ভোটের আগেই নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের প্রার্থীরা যাতে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারে, কমিশনকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এস এম ইয়াসির বলেন, জাতীয় পার্টির নির্বাচন করতে কোন বাধা কিংবা বিধিনিষেধ নেই।

কাজেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নির্বাচনে অংশ নেবো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই চমক দেখাবে জাতীয় পার্টি। তবে তা এখনই বলছি না। বেশ কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আমাদের দলে যোগ দেবেন এবং নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এছাড়াও আরও কিছু চমক থাকছে। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, জাতীয় পার্টি সবসময় নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচন করার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। পরিবেশ ও পরিস্থিতি এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হলে নির্বাচনে অংশ নেবো।

অপরদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে নতুন একটি রাজনৈতিক জোট গঠিত হচ্ছে। জোটের মুখপাত্র করা হচ্ছে জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে।  সেই জোটের সম্ভাব্য নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’।

গত রবিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে জাপার উদ্যোগ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। জাপার একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পরে যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।