“এদের চিকিৎসা দিও না”—আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের নির্দেশনা অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে

“এদের চিকিৎসা দিও না”—আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের নির্দেশনা অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজের কাল্পনিক ছবি, এআই দিয়ে তৈরি।

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৭:১০, ২৬ আগস্ট ২০২৫

জুলাই আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল ওপর দিক থেকে— হয় উঁচু জায়গা থেকে, নতুবা হেলিকপ্টার থেকে। সেসব গুলির আঘাতে কারও মাথায় ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তবু আহতদের চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয় তৎকালীন সরকারপন্থি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ তথা স্বাচিপের পক্ষ থেকে। এমনকি আহতদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে চিকিৎসা না দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ। তিনি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ২৭তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ।

জবানবন্দিতে ডা. মোস্তাক জানান, ২০২৪ সালের ১৯-২১ জুলাই এবং ৪-৫ আগস্ট সবচেয়ে বেশি গুলিবিদ্ধ রোগী হাসপাতালে আসে। ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চাকরির সুবাদে তিনি আগেও বহু গুলিবিদ্ধের চিকিৎসা করেছেন, তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের আহতদের অবস্থা ছিল ভিন্নধর্মী। অধিকাংশের শরীরে গুলি প্রবেশ করেছে ওপর থেকে নিচের দিকে, যা সাধারণত খুবই অস্বাভাবিক।

আহতদের বরাতে তিনি আরও বলেন, গুলি ছোড়া হয়েছিল উঁচু স্থান বা হেলিকপ্টার থেকে। এমনকি একজনের মাথায় গুলি ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। একবার এক বাবা-ছেলেকেও একসাথে হাসপাতালে আনা হয়— তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা মারা যান। ছেলে তখন হতাশা নিয়ে বলেন, “বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না।”

তিনি জানান, আহতদের বেশিরভাগই ছিলেন ২০–৩০ বছরের তরুণ। আন্দোলনের দিনগুলোতে শহীদুল্লাহ হলের কাছে অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা আহতদের পরিচয় জানতে চাইত। ছাত্র বলে শনাক্ত হলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হতো। এমনকি হাসপাতালে সশস্ত্র ছাত্রলীগ কর্মীরা ঢুকে কারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে তা খোঁজখবর নিত। এতে অনেক আহত ছাত্র চিকিৎসকদের অনুরোধ করত যেন তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়।

ডা. মোস্তাক অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাচিপের একাংশ চিকিৎসকদের গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসা দিতে নিরুৎসাহিত করত। তারা বলত— “এরা সন্ত্রাসী, চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।” এমনকি ২৫ জুলাই আহতদের সেবা দেওয়ার কারণে পাঁচজন চিকিৎসককে বদলি করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করা।

জবানবন্দিতে তিনি স্পষ্ট করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে এই নৃশংসতার জন্য দায়ী করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেন।

এদিন তার সঙ্গে আরও দুই চিকিৎসক ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন— মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মফিজুর রহমান এবং ঢামেকের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মনিরুল ইসলাম। আজ আরও দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। সব মিলিয়ে নবম দিনে মোট ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হবে।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement