পালিয়ে ভারতে শেখ হাসিনা, বিদেশে বসেই নতুন ষড়যন্ত্র

Published : ১২:০১, ২৭ আগস্ট ২০২৫
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারায়। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে বিদেশে থাকলেও আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরানোর জন্য নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা। দেশে অবস্থানরত নেতা-কর্মী ও আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি।
এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্যাংক লুট ও অর্থ পাচারের অভিযোগে কুখ্যাত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। বৈঠকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নতুন পরিকল্পনা করা হয়।
জানা গেছে, হাসিনার হাতে তিনি সরাসরি ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা তুলে দিয়েছেন এবং অতিরিক্ত আরও ২ হাজার কোটি টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ অর্থ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্রে ব্যয় হবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, পবিত্র উমরাহ পালনের নামে সাইফুল আলম মাসুদের সৌদি আরব যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মক্কার ফেয়ারমন্ট হোটেলে তিনি পলাতক আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। একই সঙ্গে মক্কায় একটি বিলাসবহুল হোটেল কেনার জন্য পাচারকৃত অর্থ বিনিয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথেও বৈঠকে বসেন তিনি।
৪ আগস্ট মক্কা থেকে মদিনায় গিয়ে তিনি ইলাফ আল তাকওয়া হোটেলে ওঠেন এবং চট্টগ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর ৬ আগস্ট তিনি দুবাই হয়ে বিশেষ ফ্লাইটে দিল্লি পৌঁছান। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছোট ছেলে ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এক চেয়ারম্যান। তারা দিল্লির পাঁচ তারকা হোটেল দি ওবেরেই-তে ওঠেন।
দিল্লিতে অবস্থানকালে তার সঙ্গে দেখা করেন সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ আরও কয়েকজন আওয়ামী নেতা। দেশ অস্থিতিশীল করার বিভিন্ন ষড়যন্ত্র নিয়েই সেখানে বৈঠক হয়।
এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে গোপন সাক্ষাৎ। ৮ আগস্ট দুপুরে নিজের সব ডিভাইস হোটেলে রেখে নম্বরবিহীন গাড়িতে রওনা দেন এস আলম। পথে দুইবার গাড়ি পরিবর্তন করা হয় এবং অবশেষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় লুটিয়েন্স বাংলো জোনের হাসিনার বাসভবনে। সেখানে দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত দীর্ঘ বৈঠক হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। হাসিনা সরাসরি এস আলমের কাছে ৪৫০০ কোটি টাকা দাবি করেন এবং তিনি তা মেনে নেন। এ অর্থের মূল খাত নির্ধারণ করা হয় পাঁচটি—
১. আন্তর্জাতিক লবি ও বিদেশি নীতিনির্ধারকদের ম্যানেজ করা,
২. নভেম্বর-ডিসেম্বরে নাশকতা সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলা,
৩. প্রশাসন, পুলিশ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেনা,
৪. আওয়ামী নেতাদের জামিনে অর্থ ব্যয়,
৫. এস আলমের মালিকানাধীন বিভিন্ন কারখানা ও শ্রমিকদের ব্যবহার করে আন্দোলন সংগঠিত করা।
এই বিপুল অর্থের বণ্টন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনজনকে—জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে।
BD/AN