গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিনকে হত্যার কারণ জানাল পুলিশ

গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিনকে হত্যার কারণ জানাল পুলিশ

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৩:৫৫, ৮ আগস্ট ২০২৫

গাজীপুরে জনসম্মুখে কুপিয়ে ও গলা কেটে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। হত্যার পেছনের কারণ জানিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, চাঁদাবাজি নয়, বাদশা নামের এক ব্যক্তির ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় খুন হয়েছেন তুহিন। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ উত্তর) মো. রবিউল ইসলাম এ তথ্য জানান। 

বলেছেন, ‘আমরা সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাই। তুহিনকে মৃত দেখতে পাই। আমাদের তদন্তের প্রয়োজনে আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। সিসিটিভি ফুটেজে আমরা দেখতে পাই, একজন নারী রাস্তায় একজন পুরুষের সঙ্গে কোনো একটা বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে যান। সে সময় একজন পুরুষ, একজন নারীকে আঘাত করেন।’

‘আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ওই নারীর পূর্ব পরিচিত ৪-৫ জন চাপতিসহ এসে ওই পুরুষকে আঘাত করেন। একপর্যায়ে ওই পুরুষকে আর সিসি ক্যামেরায় পাওয়া যায়নি। পারে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ওই পুরুষ জয়দেবপুর সদর হাসপাতালে আছেন। তার নাম বাদশা মিয়া।’

‘তার সঙ্গে আমাদের পুলিশের কথা হয়। আমরা তার মাধ্যমে এবং স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি, ওই ঘটনাটি সাংবাদিক তুহিন তার মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। পরে এই ঘাতকরা তুহিনকে চার্জ করেন। তিনি এই ভিডিও কেন করেছে তা জানতে চান এবং এটা ডিলিট করার জন্য বলেন। এরপর তুহিন যখন ডিলিট করতে রাজি হননি, কিংবা ভিডিওর বিষয়টি অস্বীকার করেন, তখন ওই অবস্থাতেই তার আরপর হামলা চালানো হয় এবং মেরে ফেলে।’

‘মূলত একজন নারীকে কেন্দ্র করে প্রথমে একটি হামলার ঘটনা এবং পরে একটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত আমাদের তদন্তে এর বাইরে অন্য কিছু উঠে আসেনি।’-যোগ করেন তিনি

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকার ঈদগাহ মার্কেটে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩২) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির কাজ করতেন। গাজীপুরের চান্দনায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাতে তুহিন চান্দনা চৌরাস্তা থেকে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় ৬-৭ জন যুবক দা ও চাপাতি নিয়ে তাকে জনসম্মুখে ধাওয়া করে। তিনি প্রাণ রক্ষার জন্য দৌড়ে ঈদগাহ মার্কেটের চা-পান বিক্রেতা খায়রুল ইসলামের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন।

সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে, গলায়, কাঁধে ও পিঠে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তার গলার কিছু অংশ কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়। ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। এরপর সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয় কলকারখানা ছুটি হওয়ায় আশপাশে বহু লোকজনের উপস্থিত ছিল। কিন্তু ভয়ে কেউ তুহিনকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।

নিহত তুহিনের বন্ধু শামিম বলেন, আমরা একসঙ্গেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন নারী এক ব্যক্তিকে নাজেহাল করছিল। ওই ব্যক্তি নারীটিকে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই ব্যক্তিকে আঘাত করে। তখন তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। এসময় সাংবাদিক তুহিন ঘটনাটি দেখে দৌড়ে সাইডে গিয়ে ভিডিও করছিলেন। পরে দুর্বৃত্তরা তুহিনকে ধাওয়া দেয়। তুহিন দৌড়ে পালানোর সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ধরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।

শেয়ার করুনঃ
Advertisement