পিআর ছাড়া নির্বাচন মানবে না জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন

Published : ১০:৩২, ২৫ আগস্ট ২০২৫
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। জাতীয় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক (পিআর) পদ্ধতি চালুর দাবিতে সোচ্চার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা জানিয়েছে, পিআর ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিলেও তাতে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। দলটি পিআর পদ্ধতির তীব্র বিরোধিতা করছে। এ কারণে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির প্রস্তাব গ্রহণের সময় বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেয়। তবে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই পরিষ্কার করেছে, সংবিধানে না থাকায় এই পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ নেই।
রাষ্ট্রীয় সংস্কারের অংশ হিসেবে গঠিত সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ করে। তারা নিম্নকক্ষে প্রচলিত সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা বহাল রাখলেও উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি প্রস্তাব করে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর একই সিদ্ধান্ত দেয়। আলোচনায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন উচ্চকক্ষের পাশাপাশি নিম্নকক্ষেও পিআর চালুর দাবি তোলে।
কিন্তু বিএনপি ও তাদের সহযোগী কয়েকটি দল এ প্রস্তাবের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে। অন্যান্য বেশিরভাগ দল উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে মত দেয়। শেষ পর্যন্ত বিএনপি ও এনডিএমের আপত্তি সত্ত্বেও ঐকমত্য কমিশন উচ্চকক্ষে পিআর চালুর সিদ্ধান্ত দেয়।
এ দাবি বাস্তবায়নে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন রাজপথেও কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৯ জুলাই ঢাকায় জামায়াতের মহাসমাবেশে সাত দফা দাবির মধ্যে একটি ছিল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন। সেখানে অন্যান্য দলের নেতারাও সংহতি প্রকাশ করেন।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, যারা পিআরের বিরোধিতা করছে তারা ফ্যাসিবাদী হতে চায়। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমাদও বলেন, নির্বাচন অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।
তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, তারা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করেছেন—নিম্নকক্ষ আসনভিত্তিক সরাসরি ভোটে আর উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে। তার মতে, উভয় পদ্ধতিরই ভালো-মন্দ দিক রয়েছে, কোনোটিই একেবারে নিখুঁত নয়।
সম্প্রতি তার একটি বক্তব্য বিকৃতভাবে ভাইরাল করা হয়েছে অভিযোগ করে বদিউল আলম বলেন, তাকে পিআর পদ্ধতির সমালোচক হিসেবে তুলে ধরা হলেও তা খণ্ডিতভাবে উপস্থাপিত। উল্লেখ্য, এর আগে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, পিআর পদ্ধতিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, কারণ এতে সরকারের স্থায়িত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
অন্যদিকে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীন শনিবার রাজশাহীতে বলেন, সংবিধানে না থাকায় পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। আইন পরিবর্তন হলে তা বিবেচনা করা যেতে পারে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, নিম্নকক্ষ নিয়ে আলোচনাগুলো আসলে মাঠের বক্তব্য। প্রচলিত ব্যবস্থায় ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট ভোটেই নির্বাচন হবে। উচ্চকক্ষে পিআর নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে নিজেদের অবস্থান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় পিআর আঞ্চলিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করলেও বাংলাদেশের মতো দেশে এটি কার্যকর নয়। তার মতে, এ পদ্ধতিতে কেবল হাতে গোনা কয়েকটি দলই সুবিধা পাবে, বাকিদের প্রতিনিধিত্ব প্রায় শূন্য হবে।
তিনি আরও মনে করেন, পিআর চালু হলে দলীয় প্রধানের ইচ্ছামতো প্রার্থী বাছাই হবে, জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে নয়। এতে চরম স্বৈরাচারী প্রবণতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
BD/AN