কারাগারের নাম পাল্টে ‘কারেকশন সার্ভিস

Published : ১৬:৩৭, ২৬ আগস্ট ২০২৫
একটি সংশোধন ও পুনর্বাসনের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিস বাংলাদেশ’ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে পুরান ঢাকার কারা সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ‘কারেকশন সার্ভিস অ্যাক্ট ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা অনুমোদনের জন্য ইতিমধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আইজি প্রিজন বলেন, “আমরা চাই কারাগার আর শুধু বন্দিদের আটকে রাখার জায়গা না হয়ে বরং একটি কারেকশনাল সার্ভিসে রূপ নিক। যাতে যারা এখানে আসবে তারা সংশোধিত মানুষ হিসেবে সমাজে ফিরতে পারে।”
তিনি জানান, দীর্ঘদিনের জনবল সংকট নিরসনে সম্প্রতি ১,৮৯৯ জন নতুন নিয়োগের অনুমোদন মিলেছে। পাশাপাশি আরও দেড় হাজার জনবল নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন জনবল যুক্ত হলে কারাগারের ভেতরে নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
এক বছরে কারা বিভাগে হওয়া বিভিন্ন সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজের কথা তুলে ধরে আইজি প্রিজন বলেন, মামলাজট ও জটিলতা পেরিয়ে দীর্ঘ ১২ বছর পর সিনিয়র জেল সুপারসহ সব পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা প্রশাসনে নতুন প্রাণ ফিরিয়েছে। নিয়োগবিধিও যুগোপযোগী করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অতিরিক্ত বন্দি সংকুলান মোকাবিলায় দুটি কেন্দ্রীয় ও চারটি জেলা কারাগার চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ঠেকাতে নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে দালাল চক্রের প্রভাব যেমন কমেছে, তেমনি ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্তও সহজ হয়েছে।
বন্দি ব্যবস্থাপনায় আনা হয়েছে নানা ডিজিটাল পরিবর্তন। টেলিফোন কল ও সাক্ষাৎ এখন ডিজিটালাইজেশনের আওতায় থাকায় হয়রানির সুযোগ কমেছে, পাশাপাশি নজরদারিও জোরদার হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বন্দিদের খাবারের মেন্যুতে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে এবং সকালের নাস্তা ও বিশেষ দিবসের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ অনুমোদন পেয়েছে। জামিন প্রক্রিয়ায় হয়রানি রোধে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে এবং তা নিশ্চিত করতে তদারকি চলছে। এ ছাড়া হটলাইন সেবা (১৬১৯১) চালু করা হয়েছে যাতে বন্দি-সম্পর্কিত নির্দিষ্ট তথ্য সহজে পাওয়া যায়।
ভার্চ্যুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বন্দিরা এখন সরাসরি বিচারকার্যে অংশ নিতে পারছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ‘টুয়েন্টি ইয়ার্স রুল’ (কারা বিধি ৫৬৯ ধারা) অনুযায়ী অনেক বন্দি ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছেন এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তির প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে।
বন্দিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা কারা কর্মকর্তারাও ব্যবহার করতে পারবেন। মানসিক স্বাস্থ্য ও বিনোদনের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মননচর্চার সুযোগ রাখা হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা ও কাউন্সেলিং কার্যক্রমও চালু আছে।
অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষীদের আজীবন রেশন প্রদানের সিদ্ধান্ত অনুমোদন পেয়েছে, আর কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য উন্নতমানের প্যাকেটজাত রেশন চালু হচ্ছে। বিশেষ দিবসে অতিরিক্ত খাদ্য বরাদ্দের ব্যবস্থাও রয়েছে।
এ ছাড়া কর্মকর্তাদের শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে ওয়েট চার্ট নির্ধারণ, পিটি-প্যারেড বাধ্যতামূলক করা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। দক্ষ ও আধুনিক প্রজন্মের কারারক্ষী গড়ে তুলতে প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণের মডিউল তৈরি করে সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
BD/AN