মুজিবের ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিও বাদ গেল পাঠ্যবই থেকে।
Published : ১৪:১২, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিমার্জন এনেছে সরকার। নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রস্তুত বইগুলো থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে ব্যবহৃত ‘জাতির পিতা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি বাদ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ে নতুন করে যুক্ত হয়েছে জুলাই বিপ্লব, বাকশাল ব্যবস্থা, শেখ হাসিনার শাসনামল ও তার পলায়নের ঘটনাপ্রবাহ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রকাশিত ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবই পর্যালোচনায় এসব পরিবর্তনের বিষয়টি উঠে এসেছে। ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ বাদ, তবে পরিচয় অপরিবর্তিত
পর্যালোচনায় দেখা যায়, বইটির ২১ পৃষ্ঠায় ৭ মার্চের ভাষণের বর্ণনায় পাঁচ জায়গায় শুধু ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ লেখা হয়েছে। যেখানে গত বছর একই স্থানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ উল্লেখ ছিল। তবে বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় তাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় অধ্যায়ের ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম’ শিরোনামের পাঠ-২-এ শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে সাত জায়গার মধ্যে ছয় জায়গায় ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের কাজ অংশে এক জায়গায় ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি এখনো রয়ে গেছে, যা অনিচ্ছাকৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এনসিটিবির ব্যাখ্যা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একটি সূত্র জানায়, উপাধি হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু’ ব্যবহার থাকলে তা সংশোধন করা হয়নি, তবে নামের আগে যুক্ত করা উপাধি বাদ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে লিখিত নির্দেশনা পাওয়ার পর এই সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এনসিটিবির পাঠ্যবই সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত এক বিশেষজ্ঞ জানান, জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, পৌরনীতি, বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে বিষয়বস্তুর সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বইগুলো প্রকাশ হলেও অনলাইন সংস্করণ সম্প্রতি উন্মুক্ত করা হয়েছে। নতুন সংযোজন: জুলাই বিপ্লব থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র পরিমার্জিত পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে— জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাকশাল ও একদলীয় শাসনব্যবস্থা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা
এরশাদের নয় বছরের স্বৈরশাসন খালেদা জিয়ার শাসনকাল শেখ হাসিনার শাসনামল ও পলায়ন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি নিয়ে বিতর্ক ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা থেকে মুক্তির পর রেসকোর্স ময়দানে আয়োজিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়। তবে গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এই উপাধি আরও আগে মুন্সী মেহেরুল্লাহকে দেওয়া হয়েছিল।
২০০১ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে করা এক পিএইচডি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, মুন্সী মেহেরুল্লাহই বাংলার প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু’। বিষয়টি নিয়ে লেখক মতিউর রহমান মল্লিকসহ একাধিক গবেষকও একই দাবি করেছেন। মুন্সী মেহেরুল্লাহ ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক ও ধর্মপ্রচারক। তিনি ১৮৬১ সালের ২৬ ডিসেম্বর যশোর জেলার কালীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯০৭ সালের ৮ জুন ৪৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
বিডি/এএন
































