সাইবেরিয়ান প্রজাতির পোষা বিড়াল ‘জেবু’কে ঘিরে বেড়ে ওঠার এক হৃদ্যস্পর্শী গল্প তুলে ধরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা জারনাজ রহমান।
নিজের লেখায় তিনি জেবুর শৈশব, দৈনন্দিন অভ্যাস, স্বভাব-চরিত্র এবং পরিবারের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেছেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ফেসবুক পোস্টে জাইমা রহমান জানান, ছোট্ট একটি বিড়ালছানা হিসেবে জেবু তাদের ঘরে আসার পর ধীরে ধীরে কীভাবে পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। তার প্রতিদিনের রুটিন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার আচরণ এবং আবেগী উপস্থিতির কথাও উঠে এসেছে ওই লেখায়।
তিনি লেখেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরেন। বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ফ্লাইটে তাদের সঙ্গে আসে পরিবারের বিশেষ সঙ্গী—লোমশ বিড়াল ‘জেবু’। দেশে ফেরার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেবুর ছবি ছড়িয়ে পড়লে নেট দুনিয়ায় বেশ আলোচনা তৈরি হয়।
জাইমা রহমান জানান, ‘জেবু’ রাশিয়ায় উৎপত্তি হওয়া সাইবেরিয়ান প্রজাতির একটি বিড়াল। বয়স প্রায় সাত বছর। এই প্রজাতির বিড়াল সাধারণত আকারে বড় হয় এবং তাদের শরীরে ঘন ও নরম তিন স্তরের লোম থাকে। স্বভাবে শান্ত হলেও এরা আত্মবিশ্বাসী এবং মানুষের অনুভূতি বুঝতে বেশ দক্ষ। এ কারণেই অনেকের কাছে সাইবেরিয়ান বিড়াল ‘ইমোশনাল কম্প্যানিয়ন’ হিসেবে পরিচিত।
নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে জাইমা লেখেন, জেবুকে ঘিরে মানুষের এত আগ্রহ দেখে তিনি যেমন বিস্মিত, তেমনি আনন্দও পাচ্ছেন। মজা করে তিনি উল্লেখ করেন, জেবু যদি এসব বুঝতে পারত, তাহলে হয়তো আরও অবাক হতো।
তিনি লেখেন, কোনো প্রাণীকে লালন-পালন করা মানে একটি বড় দায়িত্ব গ্রহণ করা। কারণ প্রাণীও আল্লাহর সৃষ্টি, তারও অনুভূতি আছে। জেবুকে যখন ছোট্ট বিড়ালছানা হিসেবে বাসায় আনা হয়েছিল, তখন কেউ ভাবেনি যে সে পরিবারের এত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠবে। এমনও হয়েছে, তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমান বাসায় ফিরে প্রথমেই জেবুর খোঁজ নিয়েছেন, এরপর মেয়ের।
জাইমা রহমান জানান, তার মা বাগান করা বা পাড়ায় হাঁটতে গেলে জেবু চারপাশে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে বেড়াত। আবার সন্ধ্যায় তার বাবার অনলাইন মিটিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত জেবু তার কোলে গুটিশুটি মেরে বসে থাকত, আদর উপভোগ করত।
নিজের সঙ্গে জেবুর সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি লেখেন, জেবু যেন সবসময় তার মনের অবস্থা বুঝতে পারত। ছোট্ট পা আর নরম ছোঁয়ার মাধ্যমে সে যেভাবে পারত সেভাবেই সঙ্গ দিত।
জাইমা রহমান উল্লেখ করেন, যারা পোষা প্রাণী রাখেন, তারা জানেন বাসা বদলের সময় প্রাণীদের জন্য বিষয়টি কতটা কঠিন হয়। জেবু মহাদেশ পেরিয়ে একেবারে নতুন পরিবেশে এসেছে, যা তার মতো ছোট্ট প্রাণীর জন্য বড় পরিবর্তন এবং কষ্টেরও।
পরিবারে জেবুর বিশেষ আদরের কথাও উল্লেখ করে তিনি লেখেন, জেবুর মাধ্যমে পরিবারের সবাই ধৈর্য শিখেছে, সব ধরনের প্রাণীর প্রতি মমতা ও দায়িত্ববোধ গড়ে উঠেছে। ভাষা এক না হলেও ভালোবাসা ও যত্নের প্রকাশ যে কতটা সুন্দর হতে পারে, সেটিও তারা উপলব্ধি করেছেন। কারণ ভালোবাসা কখনোই প্রজাতির সীমা মানে না।
তিনি আরও লেখেন, ছোটবেলা থেকেই তারা পশু-পাখির সঙ্গে বড় হয়েছেন। তার বিশ্বাস, যে মানুষ অন্য কোনো জীবের দায়িত্ব নেওয়ার সৌভাগ্য পায়, সে নিজের সম্পর্কে অনেক অজানা দিক আবিষ্কার করে।
সবশেষে জেবু সম্পর্কে একটি মজার তথ্যও শেয়ার করেন জাইমা রহমান। তিনি জানান, জেবু কখনো ‘মিউ মিউ’ শব্দ করে না। এমনকি আলমারিতে আটকে গেলেও না। বরং খুশি বা বিস্মিত হলে পাখির মতো নরম স্বরে ডাক দেয়। অনুমতি ছাড়া কোলে নিলে হালকা বিরক্তিতে গোঁ গোঁ করে, আর যেসব বিড়াল তার পছন্দ নয়, তাদের দিকে বেশ জোরেই চিৎকার করে।


































