লাল টি-শার্টের যুবক নুর-সম্রাটকে নির্দয়ভাবে পেটালেন, ভিডিও ভাইরাল

রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগবিরোধী মিছিল চলাকালীন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলায় সংগঠনটির সভাপতি নুরুল হক নুর মারাত্মকভাবে আহত হন। হামলার সময় লাল রঙের টি-শার্ট পরা এক যুবক নুর-সম্রাটদের ভিড়ে ঢুকে একজনকে নির্দয়ভাবে আঘাত করেন।

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতের এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, লাল টি-শার্ট পরিহিত ওই যুবক গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ ছাত্রনেতা সম্রাটকে মারধর করছেন। ঘটনার ব্যাপক সমালোচনার পর পুলিশ মাঠে নেমে হামলাকারী শনাক্তের চেষ্টা করছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মীর আসাদুজ্জামান জানান, লাল টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তিকে দ্রুত শনাক্ত করার জন্য পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ভিডিওতে দেখা লাঠিধারী ব্যক্তিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আটক করলেও তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানায়নি এবং তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গণঅধিকার পরিষদের অভিযোগ, মিছিল চলাকালীন তাদের ওপর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার রাত ৮টার পর কাকরাইল এলাকায় মশাল মিছিল বের করে সংগঠনটি। এক পর্যায়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে মিছিলে হামলার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছুঁড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে জাপার কার্যালয় চত্বরে ঢুকে পড়ে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ করে। সংঘর্ষের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। এক ভিডিওতে দেখা যায়, সেনাবাহিনী ও পুলিশ নুরুল হক নুরের ওপর লাঠিচার্জ করছেন।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, প্রথমে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। নুর মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর লাল টি-শার্ট পরিহিত যুবক বেধড়ক মারধর শুরু করেন। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত জরুরি, এবং হামলাকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত।

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব ও সিনিয়র সাংবাদিক মারুফ কামাল খান ফেসবুকে লিখেছেন, “ছবি ও ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, গাঢ় লাল রঙের শার্ট পরা এক ব্যক্তি নুরুল হক নুরকে নির্মমভাবে আঘাত করছেন। এই বেপরোয়া হামলাকারীর পরিচয় উদ্ঘাটিত হলে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। তখন জানা যাবে, কারা পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি অশান্ত করে তোলার চেষ্টা করছে, এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য কী।”

শনিবার (৩০ আগস্ট) সকালেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, লাঠির আঘাতে নুরুল হক নুরের নাক ও চোয়ালের হাড় ভেঙে গেছে। আহত অবস্থায় রাতে তাকে হাসপাতালে আনা হলে প্রথমে ক্যাজুয়ালটি বিভাগের চিকিৎসকরা দেখেন। পরে তাকে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে (ওসেক) স্থানান্তর করা হয়। রাতেই আইসিইউতে নেয়া হয়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, রাতেই পাঁচ বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয় এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু হয়। রাতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং সকালে মাথার সিটিস্ক্যান করানো হয়। দেখা গেছে, তার মাথার হাড়, নাক ও ডান চোয়ালের হাড় ভেঙে গেছে। মাথার ভেতরে সামান্য রক্তক্ষরণ হয়েছে। এছাড়া তার চোখ-মুখ ফোলা, চোখে রক্ত জমে আছে, তবে শরীরের অন্য স্থানে কোনো আঘাত নেই।