বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলে বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে জাতীয় দলের পেসার জাহানারা আলমের বিসিবিতে দেওয়া এক বিস্ফোরক চিঠি।
চিঠিতে তিনি সাবেক নির্বাচক ও নারী দলের ম্যানেজার মনজুরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। চার বছর আগের নানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ১৩ পৃষ্ঠার বিস্তারিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনের কাছে।
চিঠিতে জাহানারা লিখেছেন, মঞ্জু ভাই তার সঙ্গে অকারণে রূঢ় আচরণ করেন, মাঠে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন এবং দল থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে উপেক্ষা করা হয়। শুধু তাই নয়, তৎকালীন ইনচার্জ প্রয়াত তৌহিদ মাহমুদ ও কয়েকজন কোচের বিরুদ্ধেও তিনি অন্যায় আচরণের অভিযোগ তুলেছেন।
জাহানারার লেখা অনুযায়ী, একসময় নারী দলের কো-অর্ডিনেটর সরফরাজ বাবু তাকে বলেছিলেন, দলের ভেতরের বিরোধ মিটিয়ে একসঙ্গে খেলতে। কিন্তু এর কিছুদিন পর থেকেই মঞ্জুর আচরণ তার প্রতি বদলে যায়।
চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন—
“মঞ্জু ভাই মাঠে আমার সঙ্গে অকারণে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। চিৎকার করেন, অপমান করেন। বুঝতে পারছিলাম না, আমার ভুলটা কোথায়!”
তিনি আরও দাবি করেন, ফোন ও বার্তার মাধ্যমে তৎকালীন ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাননি।
বাংলাদেশ গেমস চলাকালীন সময় দল গঠনেও পক্ষপাত ও সিনিয়রদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ করেন জাহানারা। লিখেছেন, রুমানা তখন অধিনায়ক থাকা সত্ত্বেও তাকে এক পাশে সরিয়ে তিনটি দলের তিনজন আলাদা অধিনায়ক করা হয়। এতে রুমানা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং তিনজন সিনিয়র—জাহানারা, সালমা ও রুমানাকে আলাদা করে দেওয়া হয়, আর জ্যোতির প্রভাব বেড়ে যায়।
এক অনুশীলন ম্যাচের ঘটনা উল্লেখ করে জাহানারা লিখেছেন,
“মঞ্জু ভাই ওয়াকিটকিতে বলেন, জাহানারাকে ইয়র্কার বল করতে বলো। আমি গুড লেন্থে বল ফেলায় তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘খবরদার! জাহানারাকে আর যেন বল না দেওয়া হয়!’ মাঠে সবাই হতবাক হয়ে যায়।”
চিঠির শেষাংশে তিনি লেখেন,
“আমাকে মানসিকভাবে টর্চার থেকে বাঁচান স্যার। আমি শুধু আমার দেশের জন্য পারফর্ম করতে চাই। এটা কোনো অভিযোগ নয়, এটা একটা নোট। ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতি এলে বিসিবি নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে।”
চিঠিটি প্রকাশের পর থেকেই ক্রিকেটাঙ্গনে তীব্র আলোচনার ঝড় উঠেছে। নারী ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা, পেশাদার আচরণ ও ন্যায্য পরিবেশ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, বিসিবি এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি, তবে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকেই সুষ্ঠু তদন্তের দাবি তুলেছেন যাতে বিষয়টির সত্যতা উদঘাটিত হয় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।































