ড্যাফোডিলে পর্তুগিজ রাজবংশের আগমন ও লন্ডন টি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তি

ড্যাফোডিলে পর্তুগিজ রাজবংশের আগমন ও লন্ডন টি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তি ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৮:২৮, ১১ নভেম্বর ২০২৫

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) আজ এক অনন্য আন্তর্জাতিক গৌরবের মুহূর্তের সাক্ষী হলো।

পর্তুগিজ রাজপরিবারের প্রধান মহামহিম HRH Dom Duarte, ব্রাগঁজা ডিউক তাঁর রাজকীয় সফরে মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ১১:০০টায় ডিআইইউ ক্যাম্পাস, ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটি, বিরুলিয়া, সাভারে আগমন করেন।

এই সফরের অন্যতম আকর্ষণ ছিল লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ-এর সঙ্গে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব স্বাক্ষর অনুষ্ঠান, যা ভবিষ্যতে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এছাড়াও এই সফরের মাধ্যমে  ফেয়ার পে চার্টার  এর বাংলাদেশ আম্বাসেডর হিসাবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান কে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করা হয়েছে।

এই উদ্যোগটি মূলত যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান London Tea Exchange (LTE)-এর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, যেটি বিশ্বজুড়ে বিলাসবহুল চা বিপণনের পাশাপাশি নৈতিক ব্যবসা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR)-এর ক্ষেত্রেও পরিচিত একটি নাম।Fair Pay Charter বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কর্পোরেট হাউস ও উদ্যোক্তা সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে — যাতে প্রতিটি দেশে ন্যায্য বেতন নীতি কার্যকর হয়।

ফেয়ার পে চার্টার এর মূল লক্ষ্য হলো কর্মক্ষেত্রে ন্যায্য ও স্বচ্ছ বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা, সমান কাজের জন্য সমান পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা এবং বৈষম্যহীন একটি মানবিক কর্মসংস্কৃতি গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে কর্মীদের ন্যায্য প্রাপ্যতা, মর্যাদা ও আর্থিক স্বচ্ছতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।

এই রাজকীয় সফরের অংশ হিসেবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) এবং লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ (London Tea Exchange) এক ঐতিহাসিক সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে, যার লক্ষ্য হলো চা সংস্কৃতি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে একাডেমিক, সাংস্কৃতিক ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক সহযোগিতা জোরদার করা।

এই অংশীদারিত্বের আওতায় ডিআইইউ “Tea Mastering” বিষয়ে একটি স্বল্পমেয়াদি কোর্স চালু করবে, পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন ও মাইক্রো-ক্রেডেনশিয়াল প্রোগ্রাম শুরু করবে, শিক্ষার্থীদের জন্য চা বাগান ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা পরিদর্শনের ব্যবস্থা করবে এবং ক্যাম্পাসে একটি “Tea Corner” স্থাপন করবে, যেখানে বিশ্ব চা ঐতিহ্যকে উদযাপন করা হবে। এই সহযোগিতা শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা এবং আন্তর্জাতিক চা শিল্প সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান বৃদ্ধিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

আরেকটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং পর্তুগিজ রাজপরিবারের প্রধান মহামান্য Dom Duarte Pio, Duke of Braganza এর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে “Duke of Braganza Youth Leadership & Service Program – Bangladesh Chapter” শীর্ষক একটি সমঝোতা স্মারক, যার মূল থিম হলো “Leadership Through Service” বা ‘সেবার মাধ্যমে নেতৃত্ব’।

এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য হলো তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশ, সামাজিক সেবা, টেকসই পর্যটন এবং বৈশ্বিক নাগরিকত্বের চেতনা জাগিয়ে তোলা, যা শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে। এই উদ্যোগে পর্তুগালের রাজপরিবার রয়েল প্যাট্রোনেজ ও সার্টিফিকেশন প্রদান করবে, আর ডিআইইউ বাংলাদেশের জাতীয় সচিবালয় (National Secretariat) হিসেবে কাজ করবে, যার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও দেশব্যাপী নেতৃত্ব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে।

এছাড়াও, এই রাজকীয় সফরের অংশ হিসেবে ডিআইইউ ক্যাম্পাসে উদ্বোধন করা হয়েছে “Duke of Braganza Heritage Culinary Studio”—যা একটি অগ্রণী উদ্যোগ হিসেবে আন্তর্জাতিক রন্ধনশৈলী ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার সংস্কৃতির এক মনোমুগ্ধকর সংমিশ্রণ তৈরি করবে। এটি হবে সাংস্কৃতিক বিনিময়, খাদ্য ঐতিহ্য ও টেকসই গ্যাস্ট্রোনমির এক অনন্য কেন্দ্রবিন্দু।


রাজকীয় আগমনে পর্তুগিজ রাজপরিবারের প্রধান মহামহিম HRH Dom Duarte, ব্রাগঁজা ডিউক কে  বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার সম্মান। এরপর মহামান্য ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাঁর সফরের মধ্য দিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও পর্তুগালের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ের নতুন দিগন্তের সূচনা হলো।

রাজপরিবারের এই সফররত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড্যাফোডিল ফ্যামিলি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন,“ড্যাফোডিল সর্বদাই বৈশ্বিক শিক্ষার সংযোগ তৈরি করতে কাজ করছে। পর্তুগালের রাজপরিবারের এই সফর ও লন্ডন টি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ড্যাফোডিলের আন্তর্জাতিক উপস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মহামান্যা ডাচেস ইসাবেল ইনেস দে হেরেদিয়া, মহামান্য প্রিন্স আফনসো দে সান্তা মারিয়া, স্যার শেখ আলিউর রহমান, K.G.O.R., K.C., O.B.E. গ্রুপ চেয়ারম্যান, লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. আর. কবির , প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল , ট্রেজারার ড. হামিদুল হক খান, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।

প্রফেসর ড. এম. আর. কবির (উপাচার্য,ডিআইইউ) বলেন, আমরা তাঁর রাজকীয় আগমনে গর্বিত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে পর্তুগালের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতাকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।এই অংশীদারিত্ব শিক্ষাবিদ ও গবেষণার বিনিময়, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং যৌথ উদ্যোগের পথ প্রসারিত করবে, যা (ডিআইইউ)-র আন্তর্জাতিক মর্যাদা আরও দৃঢ় করবে।

সফরের অংশ হিসেবে আয়োজিত হয় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সুন্দরভাবে তুলে ধরে। দিনব্যাপী এই রাজকীয় সফরের সমাপ্তি ঘটে রাজপরিবারের সম্মানে আয়োজিত বিশেষ ন্যাশনাল লাঞ্চ-এর মধ্য দিয়ে, যেখানে পর্তুগিজ রাজপরিবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রশাসন, বিদেশি অতিথি, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এই ঐতিহাসিক সফর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিকীকরণ যাত্রায় এক অনন্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সংস্কৃতি বিনিময়ের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।


ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি(ডিআইইউ) হলো বাংলাদেশের এক শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা শিক্ষা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় নিবেদিত।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement