পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কবলে লোডশেডিং থাকে তিনটি উপজেলা

Published : ১৩:২৪, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি পল্লী বিদ্যুৎ এর দুর্নীতিগ্রস্থ কিছু কর্মকর্তাদের। যার ফলে এখোনো বছরের পর বছর লোডশেডিং থাকে পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটা উপজেলা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা সরাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা জানালেও তা মানছেননা খোদ পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সহ পাথরঘাটার সাব জোনাল অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তারাই। দিনে মাত্র ২৪ ঘন্টায় গ্রাহক পর্যায়ে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা লোডশেডিংয়ে রাখা হয় বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা।
এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে উপজেলার মৎস আহরণ কারী হাজার হাজার মাছ ধরা ট্রলার সহ উপকুলের লাখ লাখ জেলে ও কৃষকরা, ফলে সরকারি ভাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে উপকূলের এই মৎস্য খাত থেকে।
সমুদ্রগামি এসব মাছ ধরা ট্রলারে সময় মত বরফ সরবরাহ করতে না পাড়ায় বিপাকে পড়েন এসব মৎস্য আহরণকারী ট্রলার গুলো। এর ফলে বছরে হাজার কোটি টাকার লোকসান হয় এই অঞ্চলের জেলে ও কৃষকদের।
বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন বার বার এত লোডশেডিংয়ে রাখা হয় তা নিয়ে, অনুসন্ধানে বেরিয়ে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পাথরঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএমকে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের জাতীয় গ্রীড থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ কম করা হয়, ফলে লোডশেডিং দিয়ে বিদ্যুৎ এর ঘাটতি পুষিয়ে দিতে হয়। যদি বরগুনার থেকে সাবমেরিন কেবলের সংযোগের মাধ্যমে পথারঘাটায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় তাহলে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে।
প্রশ্ন হলো যেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বার বার বলেছেন যদি লোডশেডিং দিতে হয় তবে ঢাকায় লোডশেডিং আগে হবে, তাহলে আঞ্চলিক ভাবে তো এত লোডশেডিং হবার কথা নয়।
এই বিষয়ে আরো গভীর অনুসন্ধান চালিয়ে বের করা হয় আরো কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। পল্লী বিদ্যুৎ ডিস্টবিউশন করে জাতীয় গ্রিড, এ বিষয়ে জাতীয় গ্রিডের ইনচার্জের কাছে সঠিক তথ্য জানতে চাইলে তিনি জানান। আমাদের বিদ্যুৎ কোনো ঘাটতি নেই, আরো বেশিও সরবরাহ করা হয়।
তাহলে কেন লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান আমরা ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, সমানভাবে রাখি তবে জাতীয় গ্রীডে যাতে বড় ধরনের শার্টডাউন না হয় এজন্য দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে সাব স্টেশন গুলোতে সামান্য কিছু লোডশেডিং দিতে বলা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো সামান্য কিছু লোডশেডিং কী দিনে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন না এত সময় তো লোডশেডিংয়ের প্রশ্নই উঠে না, তাহলে দীর্ঘ সময় এই বিদ্যুৎ কেন বন্ধ রাখা হয়? এমন প্রশ্নে তিনি জানান এটা আপনি তাদের কাছ থেকেই জেনে নিন।
এদিকে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে স্থানীয় নাগরিকরা অভিযোগ করেছেন, জাতীয় গ্রিড থেকে সমান ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও দীর্ঘ সময় লোডশেডিং এর পিছনে বিদ্যুৎ চুরি করে অন্য স্টেশনে বিক্রি করা হয় ফলে ঘাটতি পুষিয়ে নিতেই আমাদের পাথরঘাটায় দিনে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ লোডশেডিং দেওয়া হয়।
এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা কিছু কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ থেকে বানিজ্যিকে ৩ টাকা বেশি দামে খুলনার কিছু কলকারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় এই সাব স্টেশন গুলো থেকে।
তবে এসব অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে পাথরঘাটা সাব স্টেশনের ডিজিএম এটিকে অস্বীকার করেন। তিনি জানান পিরোজপুর থেকে পাথরঘাটার দুরত্ব ৬৬ কিলোমিটার। এসব অঞ্চলে ঝড় বৃষ্টি হলেই ডালপালার আঘাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য অনেক সময় লোডশেডিংয়ে রেখে সেগুলো মেরামত করতে হয়।
যখন ঝড় বৃষ্টি না হয় তখন কেন দীর্ঘ সময় ধরে লোডশেডিং রাখা হয় এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
প্রশ্ন হলো সারাদেশে প্রতিটি উপজেলায় সঠিক ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সেখানে কোনো ধরনের লোডশেডিং না হলেও কেন পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, ও পাথরঘাটা, পল্লী বিদ্যুৎ থেকে বছরের পর বছর ধরে এই তিনটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ লোডশেডিং দিয়ে রাখা হয়? এর পিছনেও জড়িয়ে আছে দুর্নীতি আর অসাধু কর্মকর্তাদের হাত। পরবর্তী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসবে আরো কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
BD/AN