চাহিদা মেটাতে ভারতের ওপর নির্ভরতা বাড়াল বাংলাদেশ

Published : ২২:১২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং নিজেদের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়াতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ। ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শিল্প বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম চলায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশে ভারতের বিদ্যুৎ রপ্তানি ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এর বেশিরভাগই এসেছে আদানি পাওয়ারের একটি কয়লাচালিত কেন্দ্র থেকে।
আগে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন মূলত গ্যাস নির্ভর ছিল। ২০২০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে আসত। তবে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও খরচের চাপ মোকাবিলায় এখন দেশটি আমদানি এবং স্থানীয় কয়লাভিত্তিক উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে।
সামিট পাওয়ারের পরিচালক আদিবা আজিজ খান বলেন, “এটি আসলে খরচ সাশ্রয়ের বিষয়। সার উৎপাদনের জন্য গ্যাস জরুরি। অন্যদিকে তেল ও বিকল্প উৎস থেকে তুলনামূলক সস্তায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।”
এপেক সম্মেলনের এক আলোচনায় তিনি আরও যোগ করেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাসের মজুত নেই। এছাড়া সরবরাহ ব্যবস্থায় নানা জটিলতাও রয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ আর দেখা নাও যেতে পারে।”
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “গ্যাসের চাপ না থাকায় অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের কারণে কয়লাভিত্তিক উৎপাদনও কমেছে।”
তিনি বলেন, “সরকারের সামনে খুব বেশি বিকল্প ছিল না। লোডশেডিং রোধ করতে সরকার আমদানির পথ বেছে নেয় এবং আদানি থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহও পাওয়া যাচ্ছিল।”
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বিদ্যুৎ আমদানির হার ৯.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। একই সময়ে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ১১.৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২.৬ শতাংশ হয়েছে।
বাংলাদেশভিত্তিক শক্তি বিশ্লেষক শফিকুল আলম (ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস) বলেন, “মার্চ থেকে যখন বিদ্যুতের চাহিদা হঠাৎ বাড়তে শুরু করে, তখন সরকারকে আমদানি এবং তেলচালিত উৎপাদনের ওপর ভর করতে হয়েছে।”
অন্যদিকে, কেপলারের তথ্যে দেখা যায়, এ বছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করেছে ২৪ শতাংশ বেশি। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার বরং ১.২ শতাংশ কমে গেছে। অর্থাৎ আমদানিকৃত গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রত্যাশিতভাবে কাজে লাগানো যায়নি।
সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
BD/AN