বরগুনার মাদরাসায় বিতর্ক: খাবার নষ্ট করে ফেসবুকে ছবি পোস্ট

বরগুনার মাদরাসায় বিতর্ক: খাবার নষ্ট করে ফেসবুকে ছবি পোস্ট ছবি : সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৯:৪৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বরগুনার আমতলীতে একটি মাদরাসার অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থানীয় দুই নেতা মাহবুব কাজী ও রিপন কাজীর নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া অশোভন ঘটনার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনসাধারণ ও শিক্ষাব্যবস্থাপনা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে আমতলী উপজেলার কালিবাড়ী ন ম ম আমজাদিয়া আলিম মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম সভার সময় ঘটেছে এই ঘটনা।

মাদরাসার কর্তৃপক্ষ ৫০ জন অতিথির জন্য দুপুরের খাবার আয়োজন করলেও গুলিশাখালী ইউনিয়ন ও ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের দাওয়াত করা হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মাহবুব কাজী ও রিপন কাজী সহ ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতা মাদরাসায় প্রবেশ করেন।

ঘটনার বর্ণনা অনুযায়ী, নেতাকর্মীরা শিক্ষক ও মাদরাসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যান এবং পরে রান্না করা খাবার খেয়ে ফেলে দেন। শুধু তাই নয়, অবশিষ্ট খাবার যাতে অতিথিরা না খেতে পারে সে জন্য তারা পাতিলে টিস্যু, পানি ও নিজেদের খাওয়া অবশিষ্টাংশ ফেলে রাখেন। এ সময় শিক্ষক, কর্মচারী ও অতিথিদের সঙ্গে কু-আচরণ এবং গালাগাল করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। পরে এই ঘটনার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়, যা সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নিন্দার ঝড় উঠে।

মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোসেন বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের সভাকক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষক ও অতিথিদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই এদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” স্থানীয়রা দাবি করছেন, এমন ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত মাহবুব কাজী ও রিপন কাজী যথাক্রমে গুলিশাখালী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। মাহবুব কাজী অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, “আমাদের দাওয়াত না দেওয়ায় আমরা খাবার খেয়ে ফেলেছি, তবে কোনো খাবার নষ্ট করি নি।” যদিও স্থানীয়রা তার এই বক্তব্যকে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দও সরাসরি প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম মৃধা বলেন, “যদি দলের নেতাকর্মীরা এমন বিতর্কিত কাজে জড়িত থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এছাড়া সদস্য সচিব তুহিন মৃধা ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মামুন ভিপি বলেন, ঘটনার সত্যতা পেলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কমিটি জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

অপরদিকে, আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান জানান, “এখন পর্যন্ত এই ঘটনার কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমাদের কাছে পৌঁছায়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানও জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর দলীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা এই ঘটনার মাধ্যমে একটি গুরুতর সামাজিক ও নৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরছেন। তারা দাবি করছেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি বা ক্ষমতার প্রয়োগকে বরদাস্ত করা হবে না। স্থানীয়দের চোখে এই ঘটনায় মাদরাসার শোভা ও শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা অপরিহার্য।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement