প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের সঙ্গে বৈঠকে জানান, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত।
এ উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশি পণ্যে আরোপিত মার্কিন শুল্ক আরও হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের ওপর মার্কিন শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ব্রেন্ডেন লিঞ্চকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের একটি বড় মাইলফলক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর কৌশল, বাংলাদেশের আমদানি বাড়ানোর আগ্রহ বিশেষত তুলা, সয়াবিনসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা জোরদার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) আমদানি, বেসামরিক বিমান কেনা, মাদক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট সম্পর্কেও কথোপকথন হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দ্বিপক্ষীয় সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ধারাবাহিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আলোচনা ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষরিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের স্বার্থের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে, ফলে প্রক্রিয়াটি আরও সহজ এবং ফলপ্রসূ হয়েছে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ১১ দফা ‘বাংলাদেশ লেবার অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন এবং আন্তর্জাতিক শ্রমমান ও ন্যায্য অনুশীলন রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও জানান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং স্বল্প সুদে ঋণপ্রবাহ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
বৈঠকে ব্রেন্ডেন লিঞ্চ বাংলাদেশের গঠনমূলক মনোভাবের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের অংশীদারিত্ব আরও সুদৃঢ় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যঘাটতি কমানোর প্রস্তাব দেওয়ায় আলোচনার প্রক্রিয়া মসৃণ হয়েছে এবং ইতিবাচক ফল এসেছে।
শুল্ক চুক্তি ও আমদানি প্রতিশ্রুতিগুলো সময়মতো বাস্তবায়নের গুরুত্বও বৈঠকে গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, ইউএসটিআরের দক্ষিণ এশিয়া–বিষয়ক পরিচালক এমিলি অ্যাশবি, টেকসই উন্নয়নবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মুরশেদ, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন।