হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে চরম বিপাকে কৃষক

Published : ০০:০৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পরিবারের সদস্য, প্রিয় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার চালানোর আশা নিয়ে কঠোর পরিশ্রমে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আলু উৎপাদন করে হিমাগারে সংরক্ষণ করেও বাজারে আলুর মূল্যে ধস নামায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে কৃষক। সরকার দর ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও হিমাগার খরচ বাদে কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকা।
উৎপাদন খরচের তুলনায় এত কম দাম পাওয়ায় চাষিদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে শুধু রংপুর জেলায় ৬৬ হাজার ২৮০ হেক্টরে প্রায় ২০ লক্ষ টন আলু উৎপাদন হয়েছে।
কিন্তু হিমাগার রয়েছে মাত্র ৪০টি, যার ধারণক্ষমতা প্রায় ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টন, যা উৎপাদনের চার ভাগের এক ভাগ। একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, ৪০ হিমাগারে মজুত ৪ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৪৭ টনের মধ্যে এ পর্যন্ত আলু বের হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ১ হাজার ৫৯৪ টন, যা মজুতের চার ভাগের এক ভাগেরও কম।
এদিকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে নতুন আলুর চাষ। ৬০ দিনে এই আলু বাজারে উঠবে। এমন অবস্থায় এবার হিমাগারেই আলু থেকে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। চাষিদের হিসাব অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে আলু উৎপাদনের খরচ কেজিপ্রতি ১৮-২০ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণসহ খরচ দাঁড়াচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকারও বেশি।
কিন্তু বর্তমানে বাজারে আলুর দর কেজিপ্রতি ১২ টাকা। হিমাগারে প্রতি কেজি আলুর দর ১২ টাকা হলেও খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকা। কৃষক যদি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ না জমিতে বিক্রি করতেন তা হলে প্রতি কেজি আলুর মূল্য পেল ১৩ থেকে ১৪ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণ করার পর বর্তমানে খরচ বাদে কৃষক হাতে পাচ্ছে মাত্র ৫ টাকা।
ফলে সরকারি দর ২২ টাকা আর বাস্তবে কৃষকের প্রাপ্তি ৫ টাকার মধ্যে বিশাল বৈষম্য রয়েছে। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় এবার আলু চাষ হয়েছে ২ লক্ষ ২৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টও জমিতে। আলু উৎপাদন হয় ৫৬ লক্ষ ৬৮ হাজার ৯৯২ টন। ১১৬টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয় মাত্র ১১ লক্ষ ৯ হাজার ৬৯২ টন।
শুধু হিমায়িত আলুতে কৃষকের লোকসান এবার ১ হাজার ৯৯৭ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা। শনিবার রংপুরের অন্তত পাঁচটি হিমাগারে দেখা যায়, প্রকারভেদে প্রতি কেজি আলু সাড়ে ১০ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টুকটাক কেনাবেচা চলছে। চাহিদা না থাকায় তেমন কর্মব্যস্ততা দেখা যায়নি। হিমাগারের শেডগুলো অধিকাংশ ফাঁকা রয়েছে।
সিনহা কোল্ডস্টোরে বামনদীঘি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা নাহিদুজ্জামান বলেন, সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ৪ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তাঁর উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ২০ টাকা পড়েছে। মৌসুমের শুরুতে ১৪ টাকা কেজি হওয়ায় ৭০০ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি) আলুই হিমাগারে সংরক্ষণ করেন।
গত মাসে ১২ টাকা দরে ৩০০ বস্তা বিক্রি করেছেন। হিমাগার খরচ ৬ টাকা ৭৫ পয়সা বাদে তিনি ৫ টাকা ২৫ পয়সা পেয়েছেন। এনএন হিমাগার সুত্রে জানা যায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ থাকলেও এ পর্যন্ত বের হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার বস্তা। তারাগঞ্জের ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক নুর আলম বলেন, ১ কেজি আলু উৎপাদন করতে খরচ পড়ছে ২০ টাকা।
বস্তা, গাড়িভাড়া ও খরচ মিলিয়ে ৩০ টাকা পড়ে। অথচ বাজারে পাচ্ছি ১০ টাকা করে। হিমাগারের খরচ কেটে নিলে হাতে আসে ৫ টাকা। তা হলে সরকার কোথায় ২২ টাকায় আলু ক্রয় করছে। এ লোকসান দিয়ে আমরা কীভাবে টিকে থাকব? এভাবে চলতে থাকলে কৃষকেরা আলু চাষ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে রংপুরে আলু কেনা হলে কৃষকেরা উপকৃত হবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো তথ্য পাইনি। আগামী মৌসুমে আলুর চাষ কমবে। কৃষকেরা যেন পরিকল্পিতভাবে আলু চাষ করেন সে বিষয়ে মাঠে কাজ করছি।
BD/AN