গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১৯ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও ৮৬৬ জন। রোববার (৩ আগস্ট) ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এই তথ্য জানিয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৮৩৯ জনে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় এবং গণহত্যার রূপ নিচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে ১১৯ জনের মৃতদেহ ও ৮৬৬ জন আহতকে আনা হয়েছে। এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে, যাদের কাছে উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে পারছেন না।” ত্রাণ নিতে গিয়েও প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় সম্প্রতি ৬৫ জন নিহত এবং ৫১১ জনের বেশি আহত হন। ৭ অক্টোবরের পর থেকে শুধু ত্রাণ নিতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৪৮৭ জন এবং আহত হয়েছেন ১০ হাজার ৫৭৮ জনের বেশি।
১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান সহিংসতা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরাইল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। ইসরাইলি দাবি অনুযায়ী, ওই হামলায় তাদের ১২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ইসরাইলি বাহিনী নজিরবিহীন হামলা শুরু করে। যদিও কয়েক দফা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল, সর্বশেষ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি মার্চে ভেঙে আবারও আক্রমণ শুরু হয়। এরপর থেকে নতুন করে ৯ হাজার ৩৫০ জন নিহত এবং ৩৭ হাজার ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন।
আইসিসি ও আইসিজের নজরে নেতানিয়াহু গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গত নভেম্বরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত। আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবিক উদ্বেগ যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও জাতিসংঘ বিভিন্ন সময় মধ্যস্থতা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বা স্বাধীন তদন্তের ব্যবস্থা হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও শান্তিকামী জনগণের পক্ষ থেকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, আহতদের চিকিৎসা, অবরুদ্ধ এলাকায় ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ এবং যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক বিচার দাবি করা হচ্ছে।