চলতি বছরের এপ্রিলেই কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক তীব্রভাবে টানাপড়েনে আবদ্ধ, দুই দেশের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন সিদ্ধান্ত, সামরিক-রাষ্ট্রীয় কূটনীতি ও কূটনৈতিক পাল্টাপাল্টি যেন নতুন রূপ নেওয়া শুরু করেছে।
এখন তা আবার ভাষায়–হুঁশিয়ারিতে পৌঁছেছে; সাম্প্রতিক কালে উভয় পক্ষের শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা-নেতারা একে অপরকে সরাসরি হুঁশিয়ারি জানাচ্ছেন , এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সেদিক থেকে সাম্প্রতিক কয়েকটি বিবৃতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং একধরনের কড়া মন্তব্য করে বলেন, পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার মতো কথা ভাবারই ঝুঁকি নিতে পারে ভারত; একই সুর মেলে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীরও, তিনি বলেন, পাকিস্তানকে সন্ত্রাস সমর্থন বন্ধ করতে হবে, নয়তো পরিণতি ভয়াবহ হবে।
এই ধরনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান চুপ করে থাকতে নারাজ। দেশটির সামরিক বিবৃতিতে ভারতীয় নেতাদের ‘বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও যুদ্ধসংস্কৃত’ মন্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সিগন্যাল দিয়েছে, যদি সংঘাত শুরু হয়, তারা সংযম দেখাবে না এবং প্রতিপক্ষকে কড়া জবাব দেবে; এমনকি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের সক্ষমতা, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত পাল্টা হামলা চালানোর’ — রয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও ওই গতির ধারাবাহিকতায় মোখাম্মাল কথায় পাল্টা সুর ধরেছেন। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, যদি ভারত আবার যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তাহলে পাকিস্তান তাদের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখাবে, এবং তা এমন হবে যে ইতিহাস ও ভূগোলই বদলে যেতে পারে। তিনি অতিরিক্ত ভাষ্যে আরও যোগ করেছেন যে, শীর্ষ নেতাদের কিছু মন্তব্য দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ-প্রেক্ষাপটেরই প্রতিফলন হতে পারে।
সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ের এই উত্তেজনার উত্তরসূরিতে বর্ণিত সবই স্বরূপ উদ্বেগের। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে , যেখানে পারমাণবিক ক্ষমতা রয়েছে, শীর্ষ নেতাদের উক্তি ও প্রতিক্রিয়া কেবল শব্দ নয়; এগুলো দ্রুত রাজনীতি, কূটনীতি ও সামরিক অপারেশনের স্তরে গিয়ে প্রভাব ফেলতে পারে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারতের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায় থেকে আসা উসকানিমূলক মন্তব্য আমাদের গভীর উদ্বিগ্ন করেছে; ভবিষ্যত সংঘাতে এর নেয়া পরিণতি ভয়াল হবে। আমরা সংযম দেখালেও, যদি আক্রমণ হয়, আমরা দ্বিধাহীনভাবে পাল্টা জবাব দেব।” তারা আরও বলেছে, তাদের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা প্রতিপক্ষের ভূখণ্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত প্রতিশোধী অপারেশন চালানোর পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে খাজা আসিফের পোস্টে ব্যক্ত হওয়া কড়া ভাষা ও দ্বৈত-অর্থবহ হুমকি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও সতর্ক করেছে; অনেকেই দেখছেন, রাজনৈতিক চাপ–প্রশস্তিতে উচ্চকণ্ঠি বক্তব্যগুলো জাতীয় মনোবল ও অভ্যন্তরীণ গণমতকে প্রভাবিত করার প্রয়াসও বহন করে।
এই উত্তপ্ত বিনিময়ের একদিন আগেই ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল দ্বিবেদী বলেছিলেন, যদি পাকিস্তান মানচিত্রে নিজের স্থান রাখতে চায় তবে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন বন্ধ করতে হবে; পাশাপাশি তিনি যোগ করেন, আগের কোন অপারেশনেও যে সংযম দেখানো হয়েছিল, এবার তা অবশ্যম্ভাবী নয়, “এবার আমরা এমন কিছু করব যা নিয়ে পাকিস্তানকে ভাবতে হবে যে তারা মানচিত্রে থাকতে চায় কি না।” এসব বিবৃতি নতুন করে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।
উভয় দেশেই সামরিক-রাজনৈতিক শ্রেণির এই কঠোর অবস্থান আর কড়া ভাষার পর্যাপ্ততা স্বরূপই নয়, এর বাস্তব প্রভাব নির্ভর করবে কূটনৈতিক চ্যানেল, সামরিক কংট্রোল-রুম ও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের অংশগ্রহণে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সীমান্তযুদ্ধে-escalation রোধে উদ্বিগ্ন; যে কোনো অনিরাপদ ভাষা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে পরিস্থিতি দ্রুত কঠিন রূপ নিতে পারে।
সংক্ষেপে বলা যায়, বর্তমান মরশুমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা কেবল কূটনৈতিক বা রাজনৈতিক নয়; ভাষা-শৈলীতে এখন খোলা হুমকি ও পাল্টা হুঁশিয়ারি থেকে বোঝা যায় নির্ঘাতই একটি ঝুঁকিপূর্ণ ধারায় পৌঁছেছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ হলো: সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সংযম, কূটনৈতিক যোগাযোগ চালু রাখা এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা যেন দ্রুত সক্রিয় হয়, যাতে কোনো তাড়াহুড়ো সিদ্ধান্ত বা অপারেশন থেকে বৃহত্তর সংঘাত এড়ানো যায়।