বাড়ির আঙিনায় দেখা কুনো ব্যাঙকে অনেকেই তেমন গুরুত্ব দেন না, কেউ কেউ আবার এটিকে ঝামেলা মনে করে তাড়িয়ে দেন। অথচ অজান্তেই এই ছোট প্রাণীটি এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ—ভূমিকম্পের—আগাম সতর্কবার্তা দিতে পারে।
এখনো পর্যন্ত কোনো যন্ত্র বা বিজ্ঞানী নিশ্চিতভাবে ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেননি, কিন্তু কুনো ব্যাঙ এর সম্ভাব্য সংকেত অনেক আগেই টের পায়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, একদিন বা দু’দিন নয়, ভূমিকম্পের প্রায় এক সপ্তাহ আগেই ব্যাঙের আচরণে এই অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। ইতালিতে পরিচালিত এক গবেষণায় এই বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়, যেখানে ভূমিকম্পের পাঁচ দিন আগে ব্যাঙগুলো তাদের স্বাভাবিক আবাস্থল ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয়।
২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ ড. রাসেল গ্রান্ট প্রাণীদের ভূমিকম্পপূর্ব আচরণ নিয়ে একটি গবেষণা শুরু করেন। আগের গবেষণায় দেখা গেছে—ভূমিকম্পের আগে মাছ অস্বাভাবিকভাবে সাঁতার কাটে, সাপ গর্তে কুঁকড়ে থাকে। তবে কুনো ব্যাঙের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, সেটিই তিনি জানতে চেয়েছিলেন।
ইতালির ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় এক লেককে কেন্দ্র করে তিনি গবেষণার স্থাপনা করেন। গবেষণা শুরুর মাত্র ২৯ দিনের মাথায় সেখানে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে। গবেষণা শুরুর সময় বেশ কিছু ব্যাঙের শরীরে বিশেষ সংকেত মাপার যন্ত্র বেঁধে দেন তিনি।
২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল আবরুৎসো অঞ্চলে ওই ভূমিকম্প হওয়ার ছয়–সাত দিন আগেই ব্যাঙগুলো অদ্ভুত আচরণ শুরু করে। পাঁচ দিনের মাথায় তারা নিজেদের বাসস্থান ছাড়তে থাকে, এরপর তিন দিনের মধ্যে পুরো লেক এলাকায় কোনো কুনো ব্যাঙ আর দেখা যায়নি। শুধু সাধারণ ব্যাঙ নয়, গর্ভবতী ব্যাঙগুলোর মধ্যেও একই প্রবণতা দেখা যায়। ঠিক তিন দিন পরই আসে সেই ভয়াবহ ভূমিকম্প, যা লাকিলা শহরসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটায়।
প্রফেসর গ্রান্ট বলেন, সাধারণ বর্ষা, ঝড় অথবা পরিবর্তনশীল আবহাওয়ায় ব্যাঙদের এমন আচরণ দেখা যায় না। ব্যাঙের দেহে নিশ্চয়ই এমন কোনো প্রাকৃতিক সংবেদনশীলতা রয়েছে, যা ভূমিকম্পের আগের পরিবেশগত পরিবর্তন দ্রুত শনাক্ত করতে সক্ষম। ভূমিকম্পের পর ছয়–সাত দিন অতিবাহিত হলে চিহ্নিত ব্যাঙগুলো আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে। এই সময়ে আরও কয়েকটি হালকা ভূমিকম্পও হয়েছিল।
ড. গ্রান্টের গবেষণা দল এখন খতিয়ে দেখছে, ঠিক কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাঙরা এই সংকেত পায়। তাদের ধারণা, ভূমিকম্পের আগে ভূগর্ভস্থ পাথরের ওপর চাপ পরিবর্তনের ফলে কিছু গ্যাস বা রাসায়নিক উপাদান নির্গত হতে পারে, যা কুনো ব্যাঙের বিশেষ সেন্সর সহজেই অনুভব করে।


































