সকালের নাশতা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসেবে পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকেরা বিশেষভাবে সুপারিশ করেন। কারণ এটি শরীরকে পর্যাপ্ত শক্তি দেয়, মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং সারাদিনের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে পুষ্টিকর বিকল্প বেছে নিলে এটি দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য আরও উপকারী হয়। পুষ্টিবিদরা সকালের খাবারের জন্য ১১টি স্বাস্থ্যকর বিকল্প এবং তাদের উপকারিতা তুলে ধরেছেন। এগুলো হলো:
১. ওটমিল
ওটমিলে থাকে বেটা-গ্লুকান নামের এক ধরনের ফাইবার, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত রাখে। এছাড়া এতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ফাইবার, লিপিড, বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ। টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
২. ডিম
ডিম প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। যদিও অনেকে কোলেস্টেরল নিয়ে দ্বিধায় থাকেন, তবে পরিমিত পরিমাণে ডিম খাওয়া নিরাপদ ও পুষ্টিকর। এটি ক্ষুধা কমায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৩. বাদাম
বাদামে প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে। নিয়মিত বাদাম খেলে হৃদরোগসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমে। সকালের নাশতায় টোস্টের সঙ্গে পিনাট বাটার, আমন্ড বাটার বা ক্যাশিউ বাটার মেশিয়ে খাওয়া যায়।
৪. কফি
ক্যাফেইন মনোযোগ বাড়ায় এবং ক্লান্তি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, চিনি ছাড়া কফি এবং নন-ফ্যাট বা উদ্ভিজ্জ দুধ দিয়ে কফি খেলে স্থূলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, মেটাবলিক সিনড্রোম এবং কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমতে পারে।
৫. বেরি ফল
ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, রাসবেরি এবং ব্ল্যাকবেরি অল্প ক্যালোরিতে ভরপুর পুষ্টি দেয়। এগুলোতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার থাকে, যা হৃদরোগ এবং প্রদাহজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমায়।
৬. ফ্ল্যাক্সসিড
ফ্ল্যাক্সসিডে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে। এটি কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ত্বক ও হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়ক। গ্রাউন্ড ফ্ল্যাক্সসিড দই, স্মুদি বা ওটমিলের সঙ্গে মেশিয়ে খাওয়া যায়।
৭. দই
দই প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং এতে থাকে ক্যালসিয়াম ও প্রোবায়োটিক, যা অন্ত্র এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত রাখে। বেরি বা বাদামের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া দইতে স্বাদ এবং পুষ্টি দুটোই বাড়ে।
৮. চা
গ্রিন, ব্ল্যাক, হোয়াইট বা উলং চায়ে পলিফেনল এবং অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা মানসিক সতর্কতা বাড়ায় এবং হজমে সহায়তা করে। চা শরীরকে হাইড্রেট রাখতেও সাহায্য করে।
৯. কটেজ চিজ
কটেজ চিজ প্রোটিনের পাশাপাশি ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোবায়োটিকের উৎস। এটি একা খাওয়া যায় বা ফল, বাদাম বা সবজির সঙ্গে মিশিয়ে নাশতায় নেওয়া যায়। লবণবিহীন কটেজ চিজ বেছে নেওয়াই ভালো।
১০. কলা
কলা সহজলভ্য, দ্রুত শক্তি দেয় এবং পটাশিয়ামের চমৎকার উৎস। সবুজ কলায় থাকা রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ হজমে সহায়ক। কলা ওটমিল বা বাদামের মাখনের সঙ্গে খেলে আরও পুষ্টিকর হয়।
১১. সম্পূর্ণ শস্যজাত খাবার
হোল গ্রেইন বা সম্পূর্ণ শস্যে ফাইবার থাকে, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও স্থূলতা প্রতিরোধে সহায়ক। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং সকালের শক্তি জোগায়।
সকালের খাবারে এমন উপাদান বেছে নিন যা পুষ্টিকর, শক্তিদায়ক এবং দীর্ঘক্ষণ তৃপ্তিদায়ক। উদাহরণস্বরূপ, ওটমিলের সঙ্গে বেরি বা কলা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে, অথবা ডিম, বাদাম ও দই অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। স্বাস্থ্যকর সকালের নাশতা সারাদিনের জন্য শক্তি ও মনোযোগের ভিত্তি স্থাপন করবে।

































