আজকের সময়ে আমাদের জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা পরিবর্তন স্বাভাবিক প্রজনন প্রক্রিয়াতেও প্রভাব ফেলছে।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে মানুষ অল্প বয়সেই নানা শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে, যা শরীরের বার্ধক্য দ্রুততর করে এবং প্রজনন ক্ষমতাতেও প্রভাব ফেলে। তবে প্রজনন সক্ষমতা শুধুমাত্র নারীদের ওপর নির্ভরশীল নয়; পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমানও সন্তানের জন্মের সম্ভাবনা ও গুণগত মানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৩ বছরের পর পুরুষদের শুক্রাণুর মান দ্রুত কমতে শুরু করে। এর ফলে কেবল সন্তানধারণের ক্ষমতা কমে না, ভবিষ্যৎ সন্তানের জিনগত ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। ব্রিটেনের ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ২৪ থেকে ৭৫ বছর বয়সের ৮১ জন সুস্থ পুরুষের শুক্রাণু পরীক্ষা করেছেন। গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণুর জিনে কী ধরনের পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটছে তা নির্ধারণ করা।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর শুক্রাণুতে গড়ে ১.৬৭টি নতুন জিনগত মিউটেশন যুক্ত হচ্ছে। বয়স যখন ৪৩-এর আশেপাশে পৌঁছায়, তখন এই পরিবর্তনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এই সময়কেই তারা শুক্রাণুর ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মিউটেশনের কারণে কিছু শুক্রাণু ভবিষ্যৎ সন্তানের মধ্যে বিরল জিনগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নুনান সিনড্রোম, অ্যাপার্ট সিনড্রোম এবং কস্টেলো সিনড্রোমের মতো রোগ শিশুদের হৃদযন্ত্র, হাড়ের গঠন ও স্নায়ু বিকাশে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষক দলের প্রধান ড. মাইকেল ও’ডোনোভান জানান, পুরুষদেরও একটি জৈবিক ঘড়ি রয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে শুক্রাণুর মান ও জিনগত স্থিতিশীলতা কমে যায়। এছাড়া কিছু পরিবর্তিত শুক্রাণু ‘স্বার্থপর শুক্রাণু’ হিসেবে আচরণ করে; তারা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক শুক্রাণুকে পরাস্ত করে এবং ক্ষতিকর মিউটেশন আরও বৃদ্ধি পায়।
যদিও গবেষণাটি সীমিত পরিসরে করা হয়েছে, তবুও এটি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, পুরুষদের বয়স বাড়লে জিনগত ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যারা ভবিষ্যতে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাদের সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখা উচিত। ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা এবং প্রয়োজনে আগেভাগে শুক্রাণু সংরক্ষণ করা যৌক্তিক।
একজন সুস্থ পুরুষের জন্য প্রতি মিলিলিটারে কমপক্ষে ১৫ মিলিয়ন এবং মোট শুক্রাণু ৩৯ মিলিয়নের কম হওয়া উচিত নয়। তবে শুধুমাত্র সংখ্যা নয়, শুক্রাণুর গতি, আকার ও গুণমানও গর্ভধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক যত্ন ও সচেতন জীবনধারা দীর্ঘমেয়াদে প্রজনন ক্ষমতা ও সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।

 
				 
						
 
											 
											 
											 
											































