সব জেলায় সরকার নতুন ডিসি নিয়োগ দিতে যাচ্ছে

নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে সরকারের তৎপরতা বেড়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নতুন ডিসিদের নিয়োগ চূড়ান্ত হবে। নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

মন্ত্রণালয় জানায়, এবার কোনো রাজনৈতিক সুবিধাভোগী বা বিতর্কিত কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে না। কেউ যদি তথ্য গোপন বা ছলচাতুরীর মাধ্যমে নিয়োগ পায় এবং পরে তা প্রমাণিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ১৮ আগস্ট সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। বর্তমানে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফিটলিস্ট প্রস্তুতির প্রক্রিয়া শুরু হয় ১১ জানুয়ারি। ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের ২৬৯ জন উপসচিবের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে ফিটলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষা চলছে।

বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১২ জন কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে রয়েছেন। তবে ২৪তম ব্যাচের ২১ জন কর্মকর্তা গত ২০ মার্চ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন, কিন্তু এখনও মাঠ প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি।

গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে ১০৮ জন কর্মকর্তার ফিটলিস্ট থেকে ৬১ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়োগ নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল এবং কিছু কর্মকর্তা ‘বঞ্চিত’ দাবি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিলেন।

বর্তমানে প্রশাসনে শীর্ষ পদে অস্থিরতা ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নেই, ভারপ্রাপ্ত সচিব দিয়ে চলছে। কর্মকর্তারা মনে করেন, অবসরপ্রাপ্ত চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা বর্তমান ডিজিটাল প্রশাসনে খাপ খাইতে পারছেন না, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, ফলে প্রশাসনে শৃঙ্খলার অভাব ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক বলেন, ‘ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’ সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস-উর রহমান জানান, ‘ফিটলিস্ট থেকেই যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।’

বিশেষজ্ঞ সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘প্রশাসনের দুর্বলতা দ্রুত সমাধান করতে হবে। যোগ্য ও দক্ষ লোক নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। এখনো সময় আছে প্রশাসনের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডিসি নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাজনিত বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য চারজন উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবকে নিয়ে ‘জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিচ্ছে।