ঢাকা–৬ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারী শুটাররা যদি দেশের বাইরে পালিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে কূটনৈতিকসহ সব ধরনের চ্যানেল ব্যবহার করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, সন্ত্রাস দিয়ে কখনো রাজনীতি টিকিয়ে রাখা যায় না। রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েই আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত তাদের রাজনীতির চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি ডেকে আনছে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সুরিটোলায় রমনা রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সুবর্ণ জয়ন্তী ও প্রাক্তন-বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের মিলন মেলা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের একজন অগ্রণী সৈনিক কয়েকদিন আগে ঢাকার একটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। নামাজ শেষে রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে তাকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা দেখার পর যেকোনো নাগরিকই ভাবতে পারেন—আমি তো অনেক সময় একা নামাজ পড়ে বাসায় ফিরেছি, একা হেঁটে চলেছি। তাহলে কি এসব পথ এখন আমাদের জন্য অনিরাপদ হয়ে গেল?’
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমরা গত ১৭ বছর ধরে বলে আসছি আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল। তাদের অতীত কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে কোনোভাবেই তাদের একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। গণহত্যা ও দমন-পীড়নের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলেছে। এমনকি তাদের পলাতক ও ফাঁসিদণ্ডপ্রাপ্ত নেত্রী দেশের বাইরে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রদের হত্যার নির্দেশনা দিয়েছেন—এমন অডিও বার্তাও আমরা পেয়েছি।’
হাদির ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় বর্তমান সরকার হোক কিংবা ভবিষ্যতের যে সরকারই আসুক, আমরা আন্তরিক ও কার্যকর প্রশাসনিক পদক্ষেপ দেখতে চাই। যদি শুটাররা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে কূটনৈতিক ও অন্যান্য সব চ্যানেল ব্যবহার করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর যদি তারা দেশেই থাকে এবং এখনো গ্রেপ্তার না হয়, তাহলে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে—আওয়ামী প্রশাসনের কোনো সক্রিয় গোষ্ঠী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং তাদের পালাতে সহায়তা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গত ১৭ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস প্রত্যক্ষ করেছে। এখন আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ায় আবারও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের কিছু বুদ্ধিজীবীও এখন স্বীকার করছেন—এই সন্ত্রাসের মাধ্যমেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের শেষ কবর রচিত হয়েছে।’
রাষ্ট্রের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমরা দেখছি কিছু সন্ত্রাসীকে অর্থ ও নির্দেশনা দিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা চলছে। রাষ্ট্র কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা আমাদের স্পষ্টভাবে দেখতে হবে। সন্ত্রাসীরা কখনোই রাষ্ট্রের চেয়ে বড় হতে পারে না।’
পুলিশ ও প্রশাসনিক সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি—প্রশাসন ও পুলিশে আওয়ামী লীগের প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আপনারা কী ধরনের সংস্কার করেছেন?’
জনগণের প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষোভ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক, যার চিত্র আমরা গতকাল রাত থেকেই দেখছি। কিন্তু সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। হাদি নিজেও বলেছেন—ভাঙচুর বা আগ্রাসনের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান হবে না। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, চিন্তা ও শিক্ষার মাধ্যমেই এই লড়াই এগিয়ে নিতে হবে।’
শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, ‘সুরিটোলা স্কুল ভবন পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এটিকে আরও উন্নত করে কলেজে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে আমি নিজে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী ইনশাআল্লাহ তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।’
তিনি জানান, নির্মাণকাজ চলাকালে শিক্ষার্থীদের মালিটোলা শহীদ জিয়া স্কুলে সাময়িকভাবে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে এবং এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কোনো ভোগান্তি না হয়—সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।
রমনা রেলওয়ে সংক্রান্ত একটি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত না জানায় এই মুহূর্তে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে যদি স্কুলের কোনো সম্পত্তি বিনিময়ের প্রশ্ন আসে, তাহলে সরকারের মাধ্যমে স্কুলের স্বার্থ রক্ষায় আমি দৃঢ় ভূমিকা রাখব।’
সবশেষে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি যতই ষড়যন্ত্র করুক, সন্ত্রাস দিয়ে রাজনীতি টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নীতিতে আমরা একটি নিরাপদ ও মর্যাদাবান বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহবাগ থানা বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম স্বপন। আরও উপস্থিত ছিলেন নবাবপুর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মামুন আহমেদ, রমনা রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিহির কুমার মজুমদার, শাহবাগ থানা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন মিন্টু, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ নাজিবউল্লাহ নাজিব, পরিষদের সদস্য সচিব মতিন খান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াকুব জাহিদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।































