হাদির বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়, প্রয়োজনে সরকার পতনের আন্দোলন’

হাদির বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়, প্রয়োজনে সরকার পতনের আন্দোলন’ ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৪:০৭, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

সংগঠনটি জানিয়েছে, হাদির রক্তের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করা হবে না; প্রয়োজনে খুনিদের বিচারের দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলনেও নামবে তারা।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের।

তিনি বলেন, “বিচার এড়িয়ে নির্বাচন দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলার সুযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাবে না। দ্রুত দৃশ্যমান ও বিশ্বাসযোগ্য বিচারিক পদক্ষেপ না নিলে ইনকিলাব মঞ্চ রাজপথেই থাকবে।”

প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আবদুল্লাহ জাবের। তিনি বলেন, জানাজার মাঠে আবেগী বক্তব্য দিলেও হাদি হত্যার বিচার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান দেখা যাচ্ছে না।

জাবের বলেন, “জনগণ ড. ইউনূসকে দায়িত্ব দিয়েছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য— অসহায়ত্ব প্রকাশের জন্য নয়। তদন্তে কারা বাধা দিচ্ছে, সরকার কেন দৃঢ় হতে পারছে না— তা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে।”

দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল ও আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে দুটি প্রধান দাবি তোলে ইনকিলাব মঞ্চ। প্রথমত, শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি বিশেষ দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন।

দ্বিতীয়ত, দেশীয় সংস্থাগুলো খুনিদের শনাক্তে ব্যর্থ হলে এফবিআই বা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো আন্তর্জাতিক পেশাদার সংস্থার সহায়তা গ্রহণ। জাবের বলেন, “অতীতেও রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়েছে। জুলাই বিপ্লবের মুখ্য কণ্ঠস্বর ও ঢাকা-৮ আসনের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে হাদির বিচার রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।”

খুনিরা বিদেশে থাকলে ফিরিয়ে আনার আহ্বান
ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় ও নিরাপত্তা সহযোগিতার নজির তুলে ধরে আবদুল্লাহ জাবের বলেন, খুনিরা বিদেশে পালিয়ে থাকলে কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, “উলফা নেতাদের হস্তান্তরের নজির আছে। একতরফা সমঝোতার রাজনীতি জনগণ আর মেনে নেবে না।” ‘হাদি শুধু ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতীক’
আব্দুল্লাহ জাবের আরও বলেন, “ওসমান হাদি শুধু একজন ব্যক্তি নন; তিনি জুলাই বিপ্লব, স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার প্রতীক। সরকার যদি পরিকল্পিতভাবে হাদিকে আলোচনার কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দিতে চায়, তাহলে সরকার নিজেই রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকতে পারবে না।”

রাজপথে থাকার ঘোষণা সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামে সরকারের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক সাড়া না পাওয়ায় ইনকিলাব মঞ্চ এখন থেকে রাজপথ ছাড়বে না। বিকেল ৩টায় বিক্ষোভ মিছিলের পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তখনই চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত হবে— সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাওয়া হবে, নাকি সরকার পতনের আন্দোলনে নামা হবে।

ঢাকা-৮ আসনে হাদির স্থলাভিষিক্ত প্রার্থী দেওয়ার বিষয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান জাবের। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “হাদির বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খোলা নেই।”

শেষে তিনি বলেন, “হাদির রক্তের দাবি একটি নৈতিক ও রাজনৈতিক লঙ্গর। এই লঙ্গর উপড়ে ফেলতে চাইলে শুধু সরকার নয়, পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাই দিক হারাবে। ইনকিলাব মঞ্চ সেই লঙ্গর আঁকড়ে ধরেই ন্যায়বিচারের লড়াই চালিয়ে যাবে।”

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement