হাদি হত্যা মামলার শুটার ফয়সালের অভিনয় জীবন ঘিরে চাঞ্চল্য

হাদি হত্যা মামলার শুটার ফয়সালের অভিনয় জীবন ঘিরে চাঞ্চল্য ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৪:৪৬, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত ফয়সাল করিম মাসুদকে ঘিরে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই শুটার একসময় শোবিজ অঙ্গনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি নাটকে অভিনয়ের সময় ফয়সালের কয়েকটি ছবি ভাইরাল হলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ সালে নির্মিত ‘কিলার’ শিরোনামের একটি নাটকে তিনি অভিনয় করেছিলেন। এই তথ্য প্রকাশের পর অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে, একটি নাটকে অভিনয় করা ব্যক্তি কীভাবে এমন ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়ল।

এদিকে, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বিশ্লেষণ করে সিআইডি ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবু তালেব।

বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে এসব অস্বাভাবিক লেনদেনের চিত্র উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী ফয়সালসহ তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার সংক্রান্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডি।

অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আবু তালেব জানান, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে রাহুল এখনো গ্রেপ্তার না হলেও মামলার আলামত গোপন করা এবং তাকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে তার পরিবারের সদস্যসহ একাধিক সহযোগীকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তার অভিযানের সময় উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবইয়ের তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ শুরু করে সিআইডি।

এই বিশ্লেষণে দেখা যায়, অভিযুক্ত এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একাধিক চেকবইয়ে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থের উল্লেখ রয়েছে। যদিও এসব লেনদেনের সবগুলো চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হয়নি, তবুও এসব রেকর্ডের সমষ্টিগত মূল্য প্রায় ২১৮ কোটি টাকা।

সিআইডির প্রাথমিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অভিযুক্ত ও তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেন সংঘটিত হয়েছে। এসব লেনদেন মানিলন্ডারিং, সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আবু তালেব আরও জানান, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে মানি লন্ডারিং বিষয়ে পৃথক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডি। একই সঙ্গে মূল অভিযুক্ত ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা প্রায় ৬৫ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে দ্রুততম সময়ে বাজেয়াপ্ত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া এসব অর্থের মূল উৎস বা সরবরাহকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করার জন্য সিআইডির অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহে কোনো সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল কি না, সে বিষয়েও একাধিক টিম একযোগে কাজ করছে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও জানান, অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে মূলহোতাকে গ্রেপ্তার এবং পুরো অপরাধচক্র উন্মোচনে তদন্ত ও অভিযান চলমান রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পরবর্তীতে মরদেহ দেশে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই তাকে দাফন করা হয়।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement